ধর্ষণ মামলায় পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) খন্দকার আজিজুল হক আরজু ওরফে ফারুকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ সোমবার ঢাকার-৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সামসুননাহার এ পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. লিটন মিয়া বলেন, মামলাটি গত বছর দায়ের করা হয়। ওই সময় মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। পিবিআই তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদন আজ সোমবার ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত বছর ২২ এপ্রিল আদালতে শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী (৪৯) ট্রাইব্যুনালে এ মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করার পর পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। অভিযোগ তদন্তের পর ঢাকা মহানগর উত্তর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সাব্বির মোহাম্মাদ সেলিম ট্রাইব্যুনালে গত ৫ জানুয়ারি অভিযোগ সত্য মর্মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০০ সালের ডিসেম্বর বাদীর প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বাদী তখন একটি ফার্মাসিটিকেল কোম্পানিতে চাকরি করাকালীন বড় মগবাজার ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। আত্মীয়-স্বজনেরা তখন বাদীকে পুনরায় বিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ২০০১ সালের শেষ দিকে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর মাধ্যমে আসামির সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসামি তার পরিচিত কাজী নিয়ে বাদীর বড় মগবাজার ভাড়া বাসায় উপস্থিত হন। সেখানে বাদীর চাচা মোবারক হোসেন বাবুর উপস্থিতিতে তাদের বিবাহ। এরপর তারা মগবাজারের ভাড়া বাসা ও মোহাম্মদপুরস্থ মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। এ সময় বাদী অন্তঃসত্ত্বা হন। সন্তান গর্ভে আসার পর আসামি বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। ২০০৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাদী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আসামির আচার-আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। এক পর্যায়ে বাদীর বাসায় আসা কমিয়ে দেন। এর মধ্যে ফ্ল্যাট কেনার জন্য বাদীর বাবার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, বাদীর জমানো ৮ লাখ টাকা এবং ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির টাকা আসামিকে দেওয়া হলেও বাদীকে কোনো ফ্ল্যাট কিনে দেওয়া হয়নি। আসামিকে দেওয়া টাকাও ফেরত দেননি। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর বাসায় আসা বন্ধ করে দেন। পরে খোঁজ নিয়ে বাদী জানতে পারেন আসামির প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস করেন। সেই ঘরে কন্যা সন্তান আছে।
বাদী আরও জানতে পারেন, আসামি ফারুক হোসেন নাম ব্যবহার করলেও প্রকৃতপক্ষে তার নাম খন্দকার আজিজুল হক আরজু। তিনি মিথ্যা তথ্য ও পরিচয় দিয়ে বাদী সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণা করেছেন। এরপর আসামি কয়েকবার নিজে ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে বাদীকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে আসামি বাদীর সঙ্গে বিবাহ ও সন্তানের পিতৃ পরিচয় অস্বীকার করেন।
মামলার তদন্তে বাদীর সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়। সেখানে সন্তানটি বাদীর গর্ভজাত এবং আসামি আজিজুল হক আরজু তার জৈবিক পিতা মর্মে মতামত এসেছে।
মামলায় আসামি এমপি পরিচয় উল্লেখ না থাকলেও মামলার বাদী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।