প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটারের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক ভোটকেন্দ্রে ছিল সুনসান নীরবতা। অনেক জায়গায় ডামি প্রার্থীর মতো ভাড়াটে লোক দিয়ে ডামি ভোটার লাইন তৈরি করে ছবি তোলা হয়েছে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ির ২৭টি কেন্দ্রে একটিও ভোট পড়েনি। তবে সরকারি ভাষ্যমতে, ‘উৎসবমুখর’ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
বাস্তবতা হলো- বর্জনকারীদের হুমকি ইত্যাদির কারণে মানুষের মনে শঙ্কা থাকলেও তেমন সন্ত্রাস, সহিংসতা হয়নি। ৩০০ আসনে একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও যে কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুই বেদনার। নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ এগুলো নির্বাচনী সংস্কৃতির অংশ বলে অনেকে মনে করেন। গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, অনেক কেন্দ্রে জালভোট, ব্যালট বাক্সে আগুন, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ উঠেছে। এর পরও বড় কোনো প্রতিবাদ হয়নি। এ কথা ঠিক, নির্বাচন কমিশন কয়েকটি জায়গায় কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে।
অনিয়মসহ নানা অভিযোগে সারা দেশে নির্বাচন বর্জন করেছেন ৪২ জন প্রার্থী। তারা পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচন থেকে সসম্মানে সরে দাঁড়িয়েছেন এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। নির্বাচন কমিশনের দাবি অনুযায়ী, নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কৌতূহলোদ্দীপক হলো- ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার আধাঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলেছিল। সিইসি বলেছিলেন ২৭ শতাংশ। সেটি কিভাবে মাত্র আধাঘণ্টায় ৪১ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাল সে এক রহস্য।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের মহাসচিবও একই কথা বলেছেন। এই সুরসঙ্গতি দল ও কমিশনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নির্বাচন বর্জনকারী দল বিএনপি অবশ্য দাবি করতে পারে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোট বর্জন করেছেন। সুতরাং তাদের ভোট বর্জনের ঘোষণা সার্থকতা পেয়েছে। এমন দাবিতে সরকার অবশ্য কোনো সমস্যায় আপাতত পড়বে না বলে মনে হওয়ার কারণ হলো- আন্তর্জাতিক বিশ্বের একটি অংশের কাছে এ নির্বাচন ইতোমধ্যে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের কাছে নির্বাচন স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে হয়েছে।
আওয়ামী লীগ, তার ডামি স্বতন্ত্র ও সমঝোতার প্রার্থীদের এ নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন কতটা ঘটেছে সেটি বড় কথা নয়। বড় কথা, একটি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেছে। বৈশ্বিক সমাজের প্রভাবশালী একটি অংশের কাছে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। তবে স্মরণযোগ্য যে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর গঠিত সরকার মেয়াদ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। এবারো পারলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আসল কথা হলো- এবারের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার সঙ্কট উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে কিনা তার জন্য আরো কিছু দিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।