স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : তামান্না আক্তার (২০)। মামুন খান শুভ (২৮) এর সাথে দুই বছর প্রেম করে পরিবারের অজান্তে দুই মাস পূর্বে বিয়ে করেন প্রেমিককে। এরপর থেকে বাবার বাড়িতে অবস্থান করাকালে বিয়ের বিষয়টি সবাই জেনে যান। মেয়ের সূখের কথা চিন্তা করে বাবা-মাসহ স্বজনরা নিশ্চুপ থাকেন।
এরপর থেকে প্রেমিক স্বামী মামুন খান শুভ নিয়মিত শশুর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। এদিকে বিয়ের পর থেকে বদলে যেতে শুরু করে মামুন খান শুভ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। তামান্না শশুর বাড়িতে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে নির্যাতন করত প্রেমিক স্বামী।
ভালোবাসার মানুষের এরুপ আচরণে একা হয়ে পড়েন। এতে নিজের জীবনের প্রতি মায়া হারিয়ে ফেলেন তামান্না। জীবন খাতার সব হিসেবে শুন্য দেখে ভেতর থেকে দুমড়ে মুচড়ে মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন তিনি। তারপরও প্রেমিক স্বামীর উপর আস্থা রেখে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
এরই মধ্যে গত বুধবার (১০ মে) ভালোবাসার মানুষটি বাসায় আসলে পুনরায় সে তার কাছে শশুর বাড়ির অধিবার চায় এবং ওই বাড়ির সাথে যোগোযোগ করে দিতে বলে। এতে মামুন খান শুভ ক্ষিপ্ত হয়ে তামান্না আক্তার কে মারধর করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাসা থেকে চলে যায়।
যাবার সময় সে বলে যায়, তুই আমার সাথে আর কোন দিন যোগাযোগ করবি না, তোর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। তুই আমার অপেক্ষায় না থেকে আত্মহত্যা করে মরে যা। এরপর এ অপমান ও জীবনের ভুল হিসেবের মাশুল দিতে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৩ মে) তারিখ রাত প্রায় ১১টার দিকে তামান্না তার বন্ধু শাহীনকে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়ে বলেন “মামুন খান শুভ আমার সাথে প্রতারণা করে আমার জীবন নষ্ট করে দিছে। আমি এ জীবন রাখবনা আমি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি আমার মৃত্যুর জন্য মামুন খান শুভ দায়ী।” এরপর সে ফোনের লাইনটি কেটে দেয়।
পরে শাহীন তামান্নার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানালে তারা গিয়ে দেখেন নিজ ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো ঝুলন্ত মরদেহ। সেই সাথে ফাঁসিতে ঝুলতে থাকে জীনের না বলা গল্প। প্রেমিক স্বামীর অবহেলা ও প্রতারণায় জীবনাবসান ঘটে একটি স্বপ্নবাজ প্রেমিকার। আর সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে যান বাবা-মা।
ঘটনাটি ঘটে সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল এলাকার ৮ রং রোডে সখিরা বেগমের ভাড়া বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। নিহত তামান্না আক্তার সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা মমিন মোল্লার মেয়ে। অভিযুক্ত প্রেমিক স্বামী মামুন খান শুভ বরিশাল জেলার সদর থানার বাটামারা গ্রামের তাহে আলম হাওলাদারের ছেলে।
নিহতের ভাই জুম্মন জানান, তামান্নার মোবাইল চেক করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা মিলবে, সে তার প্রেমিকা শুভর সাথেই অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়েছে।
খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক নয়ন রাতেই লাশ উদ্ধার করেন। পরে রবিবার (১৪ মে) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় শনিবার (১৪ মে) দুপুরে নিহতের মা লতিফুন (৫২) বাদি হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণায় মামুন খান শুভকে অভিযুক্ত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা জানান, এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।