আলোচিত সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) শরিফুল হক ডালিম (মেজর ডালিম হিসেবে পরিচিত) ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, এ অভ্যুত্থানে আংশিক বিজয় অর্জন করেছেন। তাদের লাল শুভেচ্ছা জানাই। বিপ্লব একটি সমাজ যে কোনো রাষ্ট্রে একটি চলমান প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাদের বিজয় এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। তার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। সম্প্রসারণবাদী-হিন্দুত্ববাদী ভারত যার কবজায় আমরা প্রায় চলে গিয়েছি। সেই অবস্থান থেকে সেই ’৭১-এর মতো আরেকটা স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে। তা না হলে বিপ্লব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তিনি বলেন, ‘মুজিব তো মারা যাননি। সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন’। গত রবিবার ইউটিউবার ও প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের লাইভ টক শোতে এসব কথা বলেন দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা শরিফুল হক ডালিম। টক শোতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের নেপথ্যের ঘটনাবলি তুলে ধরেন বিদেশে নির্বাসিত এ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা। টকশোর শুরুতে মেজর ডালিম ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে অভিনন্দন জানান। ১৫ আগস্ট সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটার সূত্রপাত হয় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধটা কাদের ইন্টারেস্টে হচ্ছে? এটা কি আমাদের ইন্টারেস্টের জন্য হচ্ছে যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করব। নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কাজ করব। তিনি বলেন, যখন সাত দফাতে চুক্তি করে নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিনকে পারমিশন দেওয়া হলো একটা প্রভিশনাল গভর্মেন্ট গঠন করার। সাতটা ক্লজ পড়ে সাইন করার পর নজরুল ইসলাম ফিট হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, আমরা ক্রমান্বয়ে ভারতের একটা করদরাজ্য-অঙ্গরাজ্যে পরিণত হব।
মেজর ডালিম বলেন, ‘শেখ মুজিব তার জুলুমের মাত্রা এতটাই তীব্র করেছিল স্বৈরাচারী আচরণের মতো যে, তখন মানুষ রবের (আল্লাহ) কাছে মুক্তি চাচ্ছিল তার (মুজিব) জুলুমের অবসানের জন্য। মেজর ডালিম বলেন, ‘মুজিব তো মারা যাননি, মুজিব একটি সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন। সেনা অভ্যুত্থান তো আর খালি হাতে মার্বেল খেলা নয়। ওখানে দুই পক্ষ থেকেই গোলাগুলি হয় এবং হতাহত হয় দুই পক্ষেই। যেমন মুজিবের পক্ষের কিছু লোক মারা গেল, সেভাবে সেনা অভ্যুত্থানকারী বিপ্লবীদের পক্ষ থেকেও কিছু লোক প্রাণ হারায়। বিপ্লবীরা বিজয়ী হয়ে গেল, তারা ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নিল। তিনি বলেন, মুজিবের মৃত্যুর খবর জানার পর আর বাকশালের পতনের খবর জানার পর শহর-বন্দর-গ্রামের লাখ লাখ মানুষ আনন্দ মিছিল বের করল। যেসব রাজনৈতিক নেতা বা দল আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল তারাও জনসমর্থন নিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এভাবেই জনস্বীকৃতি পেয়েছিল ১৫ আগস্টের বৈপ্লবিক সামরিক অভ্যুত্থান। মেজর ডালিম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবীদের, ছাত্র-জনতার বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যদি কোনো রকম অবদান রাখতে পারি, আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যোগাযোগ থেকে- তাহলে আমরা সেটা করতে প্রস্তুত। পিছপা হব না।