শুক্রবার, ১২:০৯ পূর্বাহ্ন, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
  • ৬৫ বার পঠিত

চিকিৎসক সংকটে দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের ১৮০৭টি পদের বিপরীতে ৮২১টিই ফাঁকা।

ফলে এসব হাসপাতালে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, চিকিৎসকরা এত ব্যস্ত থাকেন যে তাদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক নেতারাও।

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক বাদে বরিশাল বিভাগে মোট ১২৫টি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এসব হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে।

জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীর শয্যা সংখ্যা এক হাজার হলেও প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার।

আর বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন তিন হাজারেরও বেশি। এখানে ৫২৬ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২৯৮ জন। হাসপাতালটিতে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে বারান্দা বা মেঝেতেই চিকিৎসা নেন বেশির ভাগ রোগী।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মাসুম সিকদারের স্ত্রী নিপা আক্তার বলেন, ডাক্তারের দেখা একদিন পাইছিলাম। তারা হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেট চেম্বারে বেশি ব্যস্ত থাকেন। চিকিৎসাসেবা ইন্টার্নরাই দিচ্ছেন।

গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন মাজহারুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসকরা এত ব্যস্ত থাকেন যে তাদের সঙ্গে কথাই বলা যায় না। ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছি না আমরা। ডাক্তার এখানে সোনার হরিণ।

পরিমল বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, পেটে ব্যথা নিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম পাঁচ দিন। কোনো ট্রিটমেন্ট না পেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই। শেরেবাংলা হাসপাতালে মূলত মুখ চিনে খাতিরদারি করা হয়। প্রভাবশালীদের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকে ২৪ ঘণ্টা আর আমাদের মতো রোগীদের জন্য থাকে নার্স আর ইন্টার্ন চিকিৎসক।

এসব বিষয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা পুরোপুরি দেওয়া সম্ভব না হলেও চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন। আমরা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি চিকিৎসকদের দায়িত্বপালনকালে অন্যত্র চেম্বারে রোগী দেখতে নিষেধ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, বরিশাল বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট এক হাজার ৮০৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু আছে মাত্র ৯৮৬ জন। ৮২১ জনের পদই ফাঁকা। বরিশালে ৭৮০ পদের মধ্যে শূন্য ৩১৫টি। পটুয়াখালীতে ২৫৯ পদের বিপরীতে শূন্য ১৪১টি, ভোলায় ২৪৭টির বিপরীতে শূন্য ১১৮টি পদ, পিরোজপুরে ১৯২টির মধ্যে শূন্য ৭৭টি, বরগুনায় ১৮৬ পদে শূন্য ১০১টি এবং ঝালকাঠিতে ১৪৩টির মধ্যে শূন্য ৬৯টি পদ।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল শাখার আজীবন সদস্য ডা. প্রদীপ কুমার বণিক বলেন, একজন চিকিৎসককে দিয়ে চারজন চিকিৎসকের কাজ করানো সম্ভব নয়।

দ্রুত যদি চিকিৎসকের এসব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া না হয় তাহলে চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক ডা. জিএম নাজিমুল হক বলেন, হাসপাতালে মূলত মিড লেভেলের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসক সংকটের সমস্যাটা অনেক দিনের। এ বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com