আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। এ উপলক্ষে কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হয়েছে মুসল্লিদের পদচারণা। মঙ্গলবার রাত থেকে আসতে শুরু করেছে মুসল্লিরা। গতকাল বুুধবার দিনের বেলায় এর পরিধি বেড়েছে। আয়োজকরা বলছেন, নির্ধারিত দিনের আগেই মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে গেলে আজ বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব বয়ান শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘ দুবছর বন্ধ থাকার পর আবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইজতেমা। আগামী ১৩ জানুয়ারি শুক্রবার শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থি) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সা’দপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে।
ইজতেমা আয়োজক মাওলানা জোবায়ের অনুসারী (আলমি শুরা) মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, ইজতেমা শুরুর আগেই এবার মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছে। সঙ্গে বিদেশি অতিথিরাও আসছেন। সব প্রস্ততি সম্পন্ন হওয়ায় তিনি মহান রবের দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার ভাষ্য, আগামীকাল যদি নির্দিষ্ট খিত্তা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হলে সন্ধ্যার পর থেকেই বয়ান শুরু হতে পারে।
ময়মনসিংহের তারাকান্দার ব্যবসায়ী মানসুরুল হক তার বাবাকে নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে মাল-সামানা কাঁধে নিয়ে মাঠে ঢুকছিলেন। তিনি জানান, মাঠে জায়গা না পাওয়ার আশঙ্কায় আগেই চলে এসেছেন। এসে দেখেন মাঠে প্রচুর লোক নির্দিষ্ট খিত্তায় অবস্থান করছেন।
বরিশাল থেকে জামাত নিয়ে এসেছেন তিন চিল্লার আমির মাওলানা ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, জোড় ইজতেমা থেকে আমরা বের হয়েছিলাম। আমাদের জামাত মানুষকে আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দিয়েছি, সঙ্গে ইজতেমায় আসতেও বলেছি। দেশি বিদেশি আলেমদের বয়ান শোনার মাধ্যমে নিজের ইহকাল ও পরকালীন জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। সবার মধ্যেই এবার ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্ততি : গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ ৫টি ক্যাম্প স্থাপন করেছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে। প্রতিটি ক্যাম্পে পালা করে দুজন চিকিৎসক, দুজন সহকারী ও দুজন অফিস সহায়ক কাজ করবে। হোন্ডা কারখানা গেট, বাটা সু গেট, মুন্নুনগর, বিদেশি তাঁবুতে এবং টঙ্গী জংশন এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের এসব ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
নদী পারাপারে পন্টুন ব্রিজ : তুরাগ তীরের ইজতেমা মাঠের মুসল্লিদের যাতায়াত সহজ করতে এবার ৫টি পন্টুন ব্রিজ নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ফায়ার সার্ভিসেরও ব্যাপক প্রস্ততি : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ফায়ার সার্ভিস। পুরো ময়দান ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারলেস ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আনা হয়েছে। অগ্নি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় ফায়ার এক্সটিংগুইসার, ফায়ার হুক, ফায়ার বিটারসহ দুজন করে ফায়ার ফাইটার দায়িত্ব পালন করবেন। মাঠের বিভিন্ন স্থানে ফায়ার সার্ভিসের ৩৬১ জন কর্মকর্তা ও ফায়ার ফাইটার মোতায়েন থাকবে। ময়দানে ফায়ার কন্ট্রোণ রুমও স্থাপন করা হয়েছে।