নেপাল সীমান্তবর্তী পশ্চিম চীনের পার্বত্য অঞ্চল তিব্বতের সাত মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও চীন। বিশেষ করে নেপালের কয়েকশ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত, এমনকি রাজধানী কাঠমান্ডুতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে
আল জাজিরা জানিয়েছে যে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৩৬ জন নিহত এবং ৬৮ জন আহতের তথ্য জানিয়েছে। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে শংকা করা হচ্ছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাতে অনেক ধসে পড়া ভবন ও বাড়িঘর দেখা গিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলো পার্বত্য অঞ্চলের খুব প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায় সেখান পৌছানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে শিগাৎসের পার্শ্ববর্তী টিংরি কাউন্টির তিনটি টাউনশিপ- চাংসুও, কুলুও এবং কুওগুও -তে নয় জন নিহত হয়েছে, সেখানে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এছাড়া তিব্বতে সকাল ১০টা পর্যন্ত “একাধিক আফটারশক” রেকর্ড করা হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্য অনুসারে, ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে প্রায় ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরতায় কেন্দ্রীভূত ছিল।
তবে চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্ক সেন্টার জানিয়েছে যে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৮।
যদিও চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা সিসিটিভি জানিয়েছে যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের ৫ কিমি (৩ মাইল) মধ্যে কয়েকটি সম্প্রদায় বসবাস করে, তিব্বতের রাজধানী লাসা থেকে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার (২৩৬ মাইল) দূরে তাদের অবস্থান ছিল।
অন্যদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে যে, শিগাৎসের নিকটবর্তী শহর লাহটসে বেশ কিছু বসতি ও দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং রাস্তার উপর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
এছাড়া চীনের সিনহুয়া বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে তিব্বতের টিংরি কাউন্টির টংলাই গ্রামে বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং সম্ভাব্য হতাহতের পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে।
উত্তর ভারতের বিহার রাজ্যে এবং নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতেও শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দূরে ভবনগুলি কেঁপে উঠলে বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে আসেন।
এছাড়া মাউন্ট এভারেস্টের কাছে নেপালের হিমালয় অঞ্চলের লোবুচের আশেপাশের অঞ্চলগুলিও ভূকম্পন এবং পরপর আফটারশকের কারণে কেঁপে ওঠে।
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। সিসিটিভি অনুসারে, গত পাঁচ বছরে শিগাটসে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের ২০০ কিলোমিটারের (১২৪ মাইল) মধ্যে ৩ বা তার বেশি মাত্রার ২৯টি ভূমিকম্প হয়েছে, যার সবকটিই সাম্প্রতিক সময়ের তুলনায় ছোট ছিল।
২০০৮ সালে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এছাড়া ২০১৫ সালে, নেপালের ইতিহাসে রাজধানী কাঠমান্ডুতে সবচেয়ে ভয়াবহ ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে, তাতে প্রায় ৯ হাজার মানুষ মারা যায় এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়।