সোমবার, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে!

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩০ বার পঠিত

তীব্র গরমে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় জনজীবন যখন অস্থির হয়ে উঠেছে, তখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কিছু জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলেও সেটি খুব বেশি স্থায়ী হবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

গত কয়েক বছর যাবত দেখা যাচ্ছে, বৈশাখ মাসের এই সময়টিতে তাপমাত্রা এ রকম থাকে এবং এবারো সেটির ব্যতিক্রম হয়নি।

এপ্রিল মাসে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মনে উদ্বেগও বাড়ছে। সাধারণত দেখা যায়, গরম বাড়লে বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা দেয়।

এমন অবস্থায় আবহাওয়া অধিদফতর যে পূর্বাভাস দিচ্ছে সেটি গরম নিয়ে দুশ্চিন্তা আরো বাড়িয়ে তুলছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পরে গরমের তীব্রতা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস করা হচ্ছে।

‘আগামী ২০ তারিখের পর বিভিন্ন জায়গায় গরমের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে,’ আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।

দেশের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এসব জায়গা হচ্ছে – রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গা।

আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, মৃদু তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং মাঝারি তাপপ্রবাহে তাপমাত্রা থাকে ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপ প্রবাহের তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেছেন, কয়েকদিন পরে ময়মনসিংহ, সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। তবে সে সম্ভাবনা কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘যে বৃষ্টিপাত হবে তাতে গরমের তীব্রতা কমবে না। গরমের তীব্রতা কমে আসার জন্য যে ধরনের বৃষ্টিপাত প্রয়োজন সেটির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না,’ বলেন তিনি।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত শিলাবৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়া বিভাগ বলেছে, গত বছরের এই দিনে অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল। তখন তাপমাত্রা ছাড়িয়েছিল ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি কেমন থাকবে?
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, সোমবার সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াট। এতে ২৪৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় কোনো লোডশেডিং ছিল না।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উৎপাদন হবে ১৫ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। সে হিসেবে লোডশেডিং হওয়ার কথা নয় বলে দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যানে।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা থাকে। একদিকে গরম এবং অন্যদিকে সেচের চাহিদা। এবারো আমরা মনে করছি যে এপ্রিল মাসটাই হবে সর্বোচ্চ চাহিদা মাস।

তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।

‘গতবার আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করেছি। এবার হয়তো ১৬ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন করতে পারবো। যদি লোডশেডিং হয়ও তাহলে ৫০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করা লাগতে পারে,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে হয়তো লোডশেডিং করতে হতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং খুব বেশি নয় বলে উল্লেখ করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, এক হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি হলে হয়তো গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হতে পারে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে সেটি কিছুটা ব্যহত হতে পারে।

রমজান মাসে দেশের গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে অভিযোগ তুলেছেন, গ্রামের বিদ্যুৎ না দিয়ে শহরাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হয়েছে।

‘এই বক্তব্যটাকে ডিনাই করার কোনো সুযোগ নাই। কিছুটা এরকম ছিল। বিষয়টা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি বলেছেন যে লোডশেডিং করার ক্ষেত্রে সব জায়গায় সমানভাবে হতে হবে,’ বলেন মোহাম্মদ হোসাইন।

তিনি বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে অল্প অল্প করে দিলে আসলে কারো ওপরে বোঝা হবে না। শহরগুলোকে লোডশেডিং মুক্ত রাখতে গিয়ে গ্রামের জন্য এটা সামান্য হলেও অসহনীয় ছিল।’

বাংলাদেশের যেসব জায়গায় গরমের তীব্রতায় জীবনযাত্রা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে তার মধ্যে উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহী অন্যতম। রাজশাহীতে দিনের অধিকাংশ সময় তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। তবে গরমের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে ৪২ ডিগ্রির মতো।

রাজশাহী শহরের বাসিন্দা লামিয়া তাসনীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এতে মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে অস্বস্তিতে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘মানুষের আচরণও বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে আমরা বাসা থেকে বের হই না,’ বলেন তিনি।

তার বর্ণনা মতে, রাজশাহী শহরে যারা বসবাস করছেন তাদের অনেকের ক্ষেত্রে গোসল করা সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।

‘যাদের বাসার ছাদে পানির রিজার্ভ ট্যাংক আছে সেখানে পানি অনেক গরম হয়ে যায়। বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত। গোসল করতে গেলে মনে হচ্ছে গা পুড়ে যাচ্ছে।’

গত সপ্তাহ খানেক যাবত ঈদের বন্ধ থাকায় স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এমন অবস্থায় শহরের অনেক বাড়িতে মানুষ নেই। এজন্য বিদ্যুৎ পরিস্থিতি গত এক সপ্তাহ যাবত মোটামুটি ভালো ছিল বলে জানাচ্ছেন রাজশাহী শহরের বাসিন্দারা।

কিন্তু এখন ধীরে ধীরে লোডশেডিং ‘চোখ রাঙাচ্ছে’ বলে বলে উল্লেখ করেন লামিয়া তাসনীম।

তিনি বলেন, ‘গত দুই দিনে দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করেছে। বিদ্যুৎ একবার গেলে ১০-১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়নি।’

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছিল। বুধবার দিনের বেশিরভাগ সময় তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি ছিল।

রাঙামাটির বাসিন্দা কায়সার আহমেদ বলেন, সেখানকার মানুষ বৃষ্টিপাতের দিকে তাকিয়ে আছেন।

তিনি বলছিলেন, গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে লোডশেডিংও কিছু বেড়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে বলে তিনি জানান। তবে জেলা শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি বেশি খারাপ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com