প্রতিযোগিতায় সবার ওপরে থাকার পরও ঢাকা-বরিশাল রুটে ফ্লাইট কমিয়েছে বাংলাদেশ বিমান। সপ্তাহে ৫ দিনের স্থলে এখন ৩ দিন সেবা দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে এই শিডিউল। অন্য এয়ারলাইন্সের তুলনায় বেশি যাত্রী বহনের পরও কেন বিমান ফ্লাইট কমাল, এর কোনো ব্যাখ্যা মিলছে না।
বিমানের দাবি, যাত্রীসংকটের কারণে কমানো হয়েছে ফ্লাইট। তবে তা মানছে না কেউ। লাভজনক এই রুটে যখন ফ্লাইট বাড়ানোর কথা ভাবছে বেসরকারি এয়ারলাইন্স, সেখানে বিমানের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুুব্ধ সবাই। অনেকেই বলছেন, বেসরকারি বিমানকে সুবিধা দিতে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান। নাহলে কম দূরত্ব ও বেশি যাত্রীর লাভজনক রুটে তাদের ফ্লাইট কমানোর কথা নয়।
ঢাকা-বরিশাল রুটকে লাভজনক বিবেচনা করে দেশের বিমান সংস্থাগুলো। ২৪ মিনিটের উড়ানে মাত্র ৬১ অ্যারোনটিক্যাল পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছলেও ভাড়া প্রশ্নে মোটা টাকা পায় তারা। ক’দিন আগেও এই রুটের ভাড়া ছিল ঢাকা থেকে ১৪৭ অ্যারোনটিক্যাল মাইল দূরে থাকা সৈয়দপুরের প্রায় সমান। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীর চাপ কিছুটা কমলে অবশ্য কমানো হয় এই ভাড়া। তারপরও যে ভাড়া, তা দেশের অন্য যে কোনো রুটের দূরত্বের তুলনায় অনেক বেশি।
বিমান এখন এই রুটে এক পথের ভাড়া নিচ্ছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ২শ টাকা। সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিচ্ছে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো। অথচ ৪ হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যেতে যেখানে সময় লাগে ১ ঘণ্টা, সেখানে বরিশালে আসা যায় মাত্র ২৪ মিনিটে।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে বেসরকারি বিমান সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কম দূরত্ব হওয়ায় এই রুটে জ্বালানি খরচ কম। যে কারণে দেশের প্রায় সব বিমান সংস্থা এই রুটকে লাভজনক বিবেচনা করে। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী যতটা কমবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল তা কমেনি। যে কারণে এই রুটে দিনে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা ইউএস-বাংলা তাদের ফ্লাইট আরও বাড়ানোর চিন্তা করছে।’
বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুর রহিম তালুকদারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিমাসে সাড়ে ১০ থেকে ১১ হাজার যাত্রী ভ্রমণ করেছে ঢাকা-বরিশাল রুটে। জুলাইয়ে এই পথে ভ্রমণ করা যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে শতকরা ৭৭ ভাগই ছিল বিমানের। একই মাসে ঢাকা থেকে বরিশালে আসা যাত্রীদের মধ্যে শতকরা ৫১ ভাগও বহন করেছে বিমান। এ রকম অবস্থায় এয়ারক্রাফট সংকটের কারণে নভোএয়ার যখন এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করল, তখন বিমানের যাত্রী আরও বৃদ্ধি পাবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই দিক বিবেচনায় না নিয়ে হঠাৎ করে যাত্রীসংকটের অজুহাতে সপ্তাহে ৫ দিনের স্থলে ৩ দিন ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দেয় বিমান। ১ আগস্ট থেকে নতুন শিডিউলে রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ফ্লাইট পরিচালনা শুরুও করেছে সংস্থাটি।
বরিশালের একাধিক টিকিটিং এজেন্ট যুগান্তরকে বলেন, ‘নভোএয়ার বন্ধ। ফ্লাইট চলছিল বিমান এবং ইউএস-বাংলার। অথচ হুট করে ফ্লাইট কমিয়ে দিল বিমান। এখন লাভ হলো ইউএস-বাংলার। তারা এখন বলতে গেলে এই রুটের একমাত্র অপারেটর। দৈনিক দুটি করে ফ্লাইট চালাচ্ছে। চাইছে ফ্লাইট আরও বাড়াতে। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে বেসরকারি এয়ারলাইন্সকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। তাছাড়া এই রুটে বিমানের টিকিট নিয়েও শুরু থেকেই জটিলতা করে আসছে একটি চক্র। অনলাইনে বুকিং দিতে গেলে দেখানো হয় টিকিট নেই। অথচ বিমানে ওঠার পর দেখা যেত অনেক আসন খালি। আবার বিমান এতকিছুর পরও কিন্তু এই রুটে সবচেয়ে বেশি যাত্রী বহন করত। সপ্তাহে ৩ দিন সার্ভিস দেওয়ার কারণে একপর্যায়ে বিমানে আর কেউ উঠতে চাইবে না। ফলে সত্যি সত্যি যাত্রীসংকটের অজুহাতে বন্ধ হয়ে যাবে বিমান। সেক্ষেত্রে লাভের ষোলো আনা যাবে বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর পকেটে।’
বিমানের এমডি অতিরিক্ত সচিব জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা তো মানতে হবে যে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা-বরিশাল রুটে যাত্রী কমেছে। যাত্রী বাড়লে আবারও আগের মতো সপ্তাহে ৫ দিন সার্ভিস চালু করব আমরা।’