বুধবার, ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
ভারত থেকে চিন্ময়ের মুক্তি দাবি কিসের আলামত, প্রশ্ন রিজভীর আইনজীবী হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে গ্রেফতার ৬ : প্রেস উইং চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের বিবৃতি দেয়া অনধিকার চর্চা : উপদেষ্টা নাহিদ রয়টার্সের মনগড়া সংবাদের প্রতিবাদ জানালো সিএমপি হাইকোর্টের নজরে ইসকন-চট্টগ্রামের ঘটনা : আদালতকে পদক্ষেপ জানাবে সরকার ইসকন ইস্যুতে দেশি-বিদেশি ইন্ধন থাকতে পারে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা, যে নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা স্বৈরাচার পালিয়ে গেলেও তাদের লেজ রেখে গেছে : তারেক রহমান বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরনে গৌরনদীতে স্মরন সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আইনজীবীকে ‘কুপিয়ে হত্যা করল’ ইসকন সদস্যরা

ডেঙ্গুর নতুন উপসর্গ, মৃত্যু ১০০ ছাড়ালো : চাপে হাসপাতালগুলো

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২২
  • ৭৫ বার পঠিত

বাংলাদেশে আজ (বুধবার) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো সাতজনের মৃত্যুর ফলে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বর্তমান বছরে ১০০ ছাড়িয়েছে। এদের অর্ধেকেরই মৃত্যু হয়েছে চলতি অক্টোবর মাসে।

এদিকে এই রোগটির যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা জানাচ্ছেন যে, এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কিছু নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। এসব উপসর্গের সাথে প্রথাগত ডেঙ্গুর উপসর্গের তেমন মিল নেই।

মুগদা হাসপাতালের পরিচালক ডা: নিয়াতুজ্জামান বলছেন, এসব নতুন উপসর্গের কারণে অনেক রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা ঠিক বুঝতে না পেরে হাসপাতালে আসতে দেরি করেছেন। যার কারণে চিকিৎসা বিলম্বিত হওয়ায় তাদের অবস্থা জটিল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব উপসর্গ দেখা যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, মাথা ব্যথা ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবারই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারা দেশে ৮৬৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের এই ১৯ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ১২ হাজার ডেঙ্গু রোগী।

গত কয়েক সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি হঠাৎ করে এতটাই খারাপ হয়েছে যে হাসপাতালে রোগী ভর্তি প্রতিদিনই বাড়ছে। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছিল।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা ওয়ার্ড। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দাতে অনেকেই শয্যার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। তবে তাদের সবাই ডেঙ্গু আক্রান্ত নন। শিশু ওয়ার্ডের দু‘টি কক্ষকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সেখানেই তিন দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত মেয়েকে নিয়ে রয়েছেন সুরমি আক্তার। জানালেন, টানা ৯ দিন ধরে ডেঙ্গুতে ভুগছে তার সন্তান। তবে মেয়েটি যে ডেঙ্গুতে ভুগছে, সেটি বুঝতে তার বেশ খানিকটা সময় লেগে গিয়েছে। তিনি বললেন, ‘না, আসলে প্রথমে আমরা বুঝতে পারি নাই ডেঙ্গুটা হইছে। প্রথম তো অনেক জ্বর আসছে। পরে আমরা হসপিটালে গিয়ে টেস্ট করিয়ে বুঝতে পারছি যে ডেঙ্গু ধরা পড়ছে, পজিটিভ।’

তিনি জানান, বেশ কিছু দিন আগে তার পরিবারের আরো এক সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। তবে সাত দিনের মধ্যে তিনি ভালো হয়ে যান।

ঢাকার খুবই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত মুগদা জেনারেল হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল মূলত নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষকে চিকিৎসা দেয়। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চাপ বাড়ছে, তাই ভবনের দশম ফ্লোরটি শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগীদের জন্যই রাখা হয়েছে।

মূল ওয়ার্ডের বাইরের খোলা জায়গা, যেটি মূলত প্রথাগত কোনো ওয়ার্ড নয়, ডেঙ্গুর কারণে রোগীর আসা এই হাসপাতালে অনেক বেড়ে যাওয়ার কারণে, ওয়ার্ডের বাইরের সেই খোলা জায়গাটিকেও ডেঙ্গু ডেডিকেটেড ওয়ার্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

মূল ওয়ার্ডে ঢোকার আগে, লিফট থেকে পা বাড়ালেই ডেঙ্গু রোগীর শয্যা চোখে পড়ছে।

একটিমাত্র ফোমের ওপর চাদর আর বালিশ, পাশে স্যালাইন ঝোলানোর একটা লম্বা স্ট্যান্ড, এমন আয়োজনেই শতাধিক ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। ওয়ার্ডে নারী-পুরুষ সবাই রয়েছেন। কেউ বেড পেয়েছেন, আবার কাউকে মেঝেতে ফোমের ওপর অস্থায়ী শয্যায় থাকতে হচ্ছে।

এখানেই কয়েকদিন ধরে একটি শয্যায় মেয়েকে চিকিৎসা দিচ্ছেন মোসাম্মত নার্গিস।

নার্গিস বলেন, ‘ওর প্রথমে জ্বর হইছে। আমি মুগদা মেডিক্যালে নিয়ে আসছি। পরীক্ষা দিসে। আমি পরীক্ষা করি নাই। আমি ভাবসি ভাইরাস জ্বর, তিন দিন নাপা খাওয়াইলেই চলে যাবে। পরে যখন দেখি জ্বর কমতেছে না তখন ওই পরীক্ষাগুলো করে ফেলছি। ডেঙ্গু ধরা পড়ছে।’

হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এদের অনেকের সাথেই কথা হয়। তবে এদের অনেকেই জানেন না যে ঠিক কিভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তারা। বেশিরভাগেরই ধারণা, বাড়ির বাইরে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা।

অনুফা আক্তার বলেন, তার বাড়িতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ‘হয়তো রাস্তা-ঘাট থেকেই হইছি। কারণ আমাদের বাসায় আমরা সবসময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাই, কয়েল ব্যবহার করি।’ তিনি বলেন, ‘বাসায় আরো বাচ্চা-কাচ্চা আছে। (বাসায়) হলে তো ওদেরও হতো। যেহেতু ওদের হয় নাই, তাইলে আমার তো রাস্তা-ঘাট থেকেই হইছে।’

সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মশা বাহিত রোগ ডেঙ্গি বা প্রচলিত ভাষায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এবারে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাচ্ছে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ডা: নিয়াতুজ্জামান। তিনিও এই তথ্য নিশ্চিত করে জানালেন, গত মাসের পর থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। সরকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বাড়তি চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়ার পর একটি ফ্লোরকে শুধুমাত্র ডেঙ্গু রোগীদের জন্যই বরাদ্দ করা হয়েছে বলে তিনি জানালেন।

ডা: নিয়াতুজ্জামান জানালেন, আরো একটি ফ্লোরকে তৈরি রাখা হয়েছে অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামলানোর জন্য। তিনি বলেন, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ৫০০ শয্যার হলেও বর্তমানে রোগী রয়েছে ৭০০ জন। আর এদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাই ১৪০ জনের মতো।

তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শুরুতে আমার স্থিতি ছিল হান্ড্রেড এর নিচে। কিন্তু অক্টোবরের শুরু থেকেই এটা ১২০ থেকে ১২৫ উঠে। যেটা এখনো কন্টিনিউ করতেছে। ১২৫ থেকে ১৩০ এইরকম রোগী এখন প্রতিদিন স্থিতিশীল। মানে ভর্তি হচ্ছে, ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গড়ে আমার প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন রোগী থাকছে।’

মুগদা হাসপাতালের এই পরিচালক জানান, তার হাসপাতালে থাকা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে এক চতুর্থাংশই শিশু। এই অবস্থাটাও এবার নতুন বলে জানাচ্ছেন তিনি। এর আগে এতো বেশি মাত্রায় শিশুদের আক্রান্ত হতে দেখা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘কালকে পর্যন্ত ২৭ জন শিশু রোগী আমার ভর্তি ছিল। প্রায় ওয়ান ফোর্থের মতো শিশুরোগী আমার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে আছে।’

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com