ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনে সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা কমিটি ৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। ফের নতুন করে এই ভয়াবহ হামলার তদন্ত শুরু করার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন।
২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হল নুরের কক্ষে বাতি নিভিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে নুরুলসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীদের হামলার পরের দিনই ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটিকে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তবে সে প্রতিবেদন ৫ বছরেও জমা হয়নি।
জানা যায়, ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে সেই বছরের ২৩ ডিসেম্বর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। কমিটিকে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। ১ জানুয়ারি ওই ছয় কার্যদিবস শেষ হয়। তবে নির্ধারিত প্রথম তারিখে কমিটি প্রতিবেদন দিতে পারেনি। পরে আরও ১০ কার্যদিবস দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিবেদন প্রকাশের নির্ধারিত দিন ১৫ জানুয়ারিও কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। পরে ফের বাড়তি সময় চাইলে উপাচার্য আরও ১০ কার্যদিবস সময় দেন। পরে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন সেই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও তৎকালীন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানও প্রতিবেদন জমা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে এই হামলার নতুন করে তদন্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন ভাবছে বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা নজিরবিহীন ছিল। আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা এটার তদন্ত ফের শুরু করব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ডাকসু হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রহসনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তারা কোনো তদন্ত না করে প্রমাণ করেছেন যে হাসিনার আমলের তদন্ত কমিটি আসলেই একটি দায় এড়ানোর কমেডি। আমরা নতুনভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে অতি দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান করছি।
বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, হামলায় ছাত্রলীগ জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কালক্ষেপণ করেছে বলে আমি মনে করি। হামলার ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জড়িত। সেই কারণে কমিটি প্রতিবেদন নিয়ে তালবাহানা করেছে। এখনো পর্যন্ত আমরা সে বিচার পাইনি। তখনকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন দলকানা ছিল। তারা ছাত্রলীগের কোনো অপকর্মের বিচার করতে পারেনি। আমরা আশা করি স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নতুন প্রশাসন এ বিষয়ে খুব দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেবেন।