শনিবার, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ট্রেনযাত্রায় পূর্ণতা পেল পদ্মা সেতু

অনলাইন ডেস্কঃ
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৩
  • ৭২ বার পঠিত

ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু। দ্বিতল এই সেতুর আপার ডেকে (ওপরতলায়) সড়কপথ চালুর প্রায় ৯ মাস পর গতকাল মঙ্গলবার লোয়ার ডেকে পরীক্ষামূলকভাবে চলেছে ট্রেন। রেলওয়ে একে ‘টেস্ট রান’ বলছে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, এর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময় পাওয়া সাপেক্ষে আগামী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের মাধ্যমে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর হয়ে ট্রেন চলবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত।

এক ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের যাত্রায় ট্রেনটি ৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ভাঙ্গা থেকে পৌঁছে মাওয়ায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে সময় নেয় ১৮ মিনিট। দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে ট্রেনটি মূল সেতুতে ওঠার পর আতশবাজি ফাটানো হয়। পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেলপথে ট্রেনটি চলার সময় ‘ঝিকঝিক’ শব্দ ছিল না। অনেকটা মেট্রোরেলের মতো শোঁ শোঁ শব্দে চলে ট্রেন।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন সমকালকে জানান, নবনির্মিত রেললাইনে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব। পরীক্ষামূলক যাত্রা বলে কখনও ১০ কিলোমিটার গতিতে, আবার কখনও ২৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হচ্ছে। পরীক্ষামূলক যাত্রা অব্যাহত থাকবে। আগামী দিনগুলোতে গতি বাড়িয়ে ট্রেন চালানো হবে।
ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় রেলমন্ত্রীর সহযাত্রী হন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, নাঈম রাজ্জাক, মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি প্রমুখ। ছিলেন রেলের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এবং পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ট্রেনে খোশগল্পে মাতেন এমপি ও মন্ত্রীরা।

দক্ষিণবঙ্গের এমপিরাই ছিলেন বেশি উচ্ছ্বসিত। নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, স্বপ্নেও ভাবেননি পদ্মা নদীতে কোনোদিন সেতু হবে, ট্রেন চলাচল তো অনেক দূরের কথা। শেখ হাসিনার দৃঢ়তায়ই সম্ভব হয়েছে সেতু নির্মাণ। ট্রেন চলাচল শুধু ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করবে না, পদ্মার পশ্চিমপাড়ের মানুষের জীবন বদলে দেবে। ট্রেনের সামনে ছিল একটি গ্যাং কার (পরিদর্শন ট্রেন)। এতে যাত্রী হন রেল সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরপর দুটি ট্রেনের যাত্রায় উচ্ছ্বাস দেখান সাধারণ মানুষও। চৈত্রের তপ্ত দুপুরে ট্রেনটি

যখন রেললাইনে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি মাওয়ার দিকে, তখন স্থানীয়রা হাত নেড়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। বাড়ির সামনে দিয়ে প্রথমবারের ট্রেন চলাচলের দৃশ্য মোবাইলে বন্দি করেন। উচ্ছ্বসিত শিশুরা রেললাইনের কাছাকাছি এসে হাত নাড়ে। অনেকে ধীরগতিতে চলা ট্রেনের সঙ্গে দৌড় ‘প্রতিযোগিতা’ করে।
পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গকে যুক্ত করতে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল লাইনসহ ২১৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে চীন ঋণ দিচ্ছে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। ঋণ চুক্তি সইয়ে বিলম্বের কারণে ২০১৭ সালে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে রেলমন্ত্রী জানান, ছয় মাসের মধ্যে ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী বছর যশোর পর্যন্ত রেল চলবে। ৩১ মার্চ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজ এগিয়েছে সাড়ে ৭২ শতাংশ। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজ হয়েছে ৯১ ভাগ। ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬৮ শতাংশ। প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধির বিষয়ে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগামাী বছরের জুনে তা বলা যাবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ জানান, ১২৭ দিনে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে পদ্মা সেতুতে।

ট্রেনটির চালকের আসনে ছিলেন রেলওয়ের লোকোমোটিভ মাস্টার (এএলএম) রবিউল আলম। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ বাংলার যোগাযোগের নতুন অধ্যায় রচিত হলো। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের প্রায় ৯ মাস পর রচিত হলো এ মাইলফলক। যদিও বাণিজ্যিকভাবে এ পথ দিয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উৎসবমুখর পরিবেশে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে পরীক্ষামূলক ট্রেনযাত্রার উদ্বোধন করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বপ্ন একটা একটা করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে আজ এ ট্রায়াল ট্রেন চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে এবং তার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা এ ট্রেনকে যশোর পর্যন্ত নিয়ে যাব। তবে তার জন্য আমাদের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com