গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার শপথ নিয়েছেন ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস। দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসও একই শপথ নিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিকে খালি করার পরিকল্পনা জানানোর পর রোববার এমন অবস্থান জানিয়েছেন তাঁরা।
গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা রাশাদ আল নাজি বলেন, ‘ট্রাম্প ও পুরো বিশ্বকে বলছি, যা কিছুই হোক না কেন, আমরা ফিলিস্তিন কিংবা গাজা ছাড়ব না।’
ইতিমধ্যে ফিলিস্তিনি সূত্রগুলো বলেছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় জিম্মি ও কারাবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, তা সম্ভবত সমাধানের পথে আছে। আর সেটা হলে উপকূলীয় একটি সড়কে ভিড় জমানো ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে পারবেন। তাঁরা উত্তরাঞ্চলে ফেরার জন্য অনুমতির অপেক্ষায় আছেন।
যুদ্ধবিরতির আওতায় সর্বশেষ গত শনিবার চার ইসরায়েলি নারী জিম্মি, সব সেনাসদস্য এবং ২০০ জন কারাবন্দী মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পাওয়া কারাবন্দীদের প্রায় সবাই ফিলিস্তিনি নাগরিক। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বন্দী বিনিময় হলো। যুদ্ধবিরতি ইতিমধ্যে দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গাজা একটি ‘বিধ্বস্ত জায়গায়’ পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনদের গাজা থেকে সরানোর ব্যাপারে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি চাই, মিসর এই মানুষদের নিয়ে যাক। আমি চাই জর্ডান এসব মানুষকে সরিয়ে নিক।’
মাহমুদ আব্বাসের কার্যালয় থেকে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের জমি ও পবিত্র স্থানগুলো ছাড়বে না।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার সদস্য বাসেম নাইম এএফপিকে বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা এ ধরনের প্রকল্পগুলোকে বানচাল করবেন।
গাজা উপত্যকায় হামাসের পাশে থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে ইসলামিক জিহাদ। তারাও ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে।
শনিবার এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আপনারা সম্ভবত ১৫ লাখ মানুষের কথা বলছেন এবং আমরা পুরো জায়গাটিই খালি করে ফেলব।’
ট্রাম্প মনে করেন, গাজার প্রায় ২৪ লাখ অধিবাসীকে সরিয়ে নেওয়ার কাজটি ‘সাময়িক বা দীর্ঘ মেয়াদে’ হতে পারে।
আরব লিগ ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করেছে তারা।
আরব লিগ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জনগণকে তাদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও উচ্ছেদ করাকে কেবল জাতিগত নিধন বলেই ডাকা যেতে পারে।’
জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়টি আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করি এবং তা অটল থাকবে। জর্ডান জর্ডানের মানুষদের আর ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনি মানুষদের জন্য।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের ‘অখণ্ড অধিকারের’ লঙ্ঘনকে প্রত্যাখ্যান করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু হয়। ১৫ মাসের ওই যুদ্ধে গাজার প্রায় সব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। হামাসের আক্রমণের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে প্রায় সব গাজাবাসী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।