পুলিশের পিকআপভ্যানে ধাক্কা লাগায় ট্রাকচালককে আটকের পর গুলি করে তার একটি পা পঙ্গু করে দেওয়ার অভিযোগে সিরাজগঞ্জের সাবেক দুই ওসিসহ পুলিশের ১৫ সদস্যের নামে মামলা দায়ের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানা আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী এ আদেশ দেন।
মামলার বাদী পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নেছড়াপাড়া (শিববারী) গ্রামের মো. রহম মোল্লার ছেলে।
আসামিরা হলেন, উল্লাপাড়া মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম, সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি মো. এনামুল হক, সলঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ তাজ উদ্দিন আহমেদ, উল্লাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্দুস সালাম, সলঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক মনছুর রহমান ও সলঙ্গা থানার এএসআই আব্দুল কুদ্দুস। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ৯/১০ জনকে।
মঙ্গলবার রাতে বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম হাফিজ কিরণ।
তিনি বলেন, ২ জানুয়ারি রোকন মোল্লা আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করেন। বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাসেল মাহমুদ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রোকন মোল্লার মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরিচালক কালক্ষেপণ করায় আদালত তাকে শোকজ করেন। এরপর সোমবার (২৭ জানুয়ারি) তিনি মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করলে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এফআইআর হিসেবে দায়ের জন্য পুলিশ সুপার সিরাজগঞ্জে এ নির্দেশ দেন বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে এম শাহরিয়ার শহীদ বাপ্পী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ৩১ মে ট্রাকচালক রোকন মোল্লা ট্রাকের মালামাল বগুড়া পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রাকটি উল্লাপাড়া পৌর এলাকার কাওয়াক মোড় এলাকায় এলে বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় থানার ওসির ব্যবহৃত পিকআপভ্যানে ধাক্কা লাগে। তখন ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে রিভলবার বের করে রোকনের দিকে তাক এবং ফোর্স নিয়ে ধাওয়া করেন। রোকন ট্রাক নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সলঙ্গা থানার সীমানায় ঢুকে পড়েন। তখন ওসি উল্লাপাড়া আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুলের নির্দেশে সলঙ্গা ওসি এনামুল হক ফোর্স নিয়ে তাকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে সলঙ্গা থানার হরিণচড়া বাজারে তাকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এরপর তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রাস্তার ঢালে নিয়ে বিবস্ত্র করে পুকুরে চুবিয়ে রাখেন। পুকুর থেকে তুলে নেওয়ার পর ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম রিভলবার দিয়ে রোকনের ডান পায়ে হাঁটুর নিচে গুলি করেন। তিনি চিৎকার করলে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিকআপে করে সলঙ্গা থানায় নিয়ে যায়। সেখানে সাব ইন্সপেক্টরদের কক্ষে নিয়ে তাকে নির্যাতন করে। নিজেদের রক্ষায় ওইদিনই রোকন মোল্লার নামে সলঙ্গা থানায় দুটি ও উল্লাপাড়া থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে রোকনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে প্রথমে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। সেখানে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে বাদীর ডান পা সম্পূর্ণ কেটে ফেলা হয়। এভাবেই পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের মাধ্যমে ট্রাকচালক রোকনকে চিরদিনের জন্য পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে।
উল্লাপাড়া থানার ওসি আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম বদলিজনিত কারণে জেলার বাইরে থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার সাবেক ওসি এনামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোকন মোল্লা নামে এক আন্তঃজেলা ডাকাত উল্লাপাড়া কাওয়াক মোড় এলাকায় রাত ১টার দিকে ডাকাতির প্রস্তুতির নিচ্ছিল। তাকে উল্লাপাড়া থানা পুলিশ ধাওয়া করলে শাহজাদপুরের দিকে যায়। শাহজাদপুর থানা পুলিশের ধাওয়ায় সেখান থেকে আবারও উল্লাপাড়ায় আসেন। সেখান থেকে আবার সলঙ্গা থানায় এলাকায় চলে এলে আমরা ধাওয়া করি। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া করার পর হরিণচড়া এলাকায় তাকে ঘিরে ফেলা হয়। তখন তিনি গাড়ি রেখে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, পুলিশ পেছনে ধাওয়া করলে তিনি গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে তিনি আহত হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহসহ ছয় জেলায় ২৮টি মামলা রয়েছে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পিটিশনটি মামলা হিসেবে রুজু করে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।