রবিবার, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

টাকা সঙ্কটে ২ দিনে ব্যাংকগুলোর ধার ৪২ হাজার কোটি টাকা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪
  • ১৮ বার পঠিত

টাকার সঙ্কটে অনেকটা নাজেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো অন্য ব্যাংক থেকে ধার করছে। পর্যাপ্ত অর্থ না পাওয়ায় ছুটে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দুই দিনে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তঃব্যাংক থেকে ধার করেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৯ হাজার কোটি টাকা একাই জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এজন্য সুদহারও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে নগদ টাকার সঙ্কটের অন্যতম কারণ হলো নগদ আদায় কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের ছাড় দিচ্ছে। কখনো ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, কখনো সুদহার মওকুফের সুযোগ দিয়ে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী আমানত আসছে না। একদিকে বিনিয়োগ থেকে আদায় কমে গেছে, অপরদিকে চাহিদা অনুযায়ী আমানত না আসায় নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আর এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই প্রতিদিনই ধার করে চলছে কিছু ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, তারল্য সঙ্কট মেটাতে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো গত রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার নিয়েছে ১১ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। এর সুদের হার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ। আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো ধার করতো সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে। রোববার তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে ওঠেছে। সোমবারও সর্বোচ্চ সুদ হার ১০ শতাংশে ওঠেছে। এদিন ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ১৭ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। দুই দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করেছে ২৯ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এর বাইরে কলমানি মার্কেট থেকে রোববার ধার করেছিল ছয় হাজার কোটি টাকা। সোমবার ধার করেছে সাত হাজার কোটি টাকা। দুই দিনে ধার করেছে ১৩ হাজার কোটি টাকা।

এ খাতে সর্বোচ্চ সুদের হার ওঠেছে সাড়ে ১২ শতাংশ। সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার করে এক দিনের জন্য। যা ‘ওভারনাইট’ হিসেবে পরিচিত। পরের দিনই তা ফেরৎ দিয়ে দিচ্ছে। তবে ধার দাতা ও গ্রাহীতা দুই পক্ষ একমত হলে ধারের মেয়াদ বাড়াতে বা নবায়ন করতে পারে। এছাড়া ব্যাংকগুলো ৫ দিন, ৭ দিন, ১২ দিন, ১৪ দিন মেয়াদি উপকরণে স্বল্প মেয়াদি ধার নিতে পারে। ৯২ দিন দিন মেয়াদি ধারও নিচ্ছে। ব্যাংকগুলো মেয়াদ শেষে ওই সব ধারের অর্থ ফেরত দিয়ে আবার নতুন করে ধার নিচ্ছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, টাকার সঙ্কট মেটানোর জন্য কিছু ব্যাংক এখন উচ্চ সুদে আমানত গ্রহণ করছে। উচ্চ সুদে আমানত নেয়ায় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় মেটাতে উচ্চ সুদে ঋণ দিচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে বিনিয়োগ ব্যয়। বিনিয়োগে ব্যয় বাড়তির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে, যা উদীয়মান মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিচ্ছে। শুধু মূল্যস্ফীতিই বাড়ছে না, সামগ্রিক বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নগদ আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি গুণগত বিনিয়োগ দেয়া প্রয়োজন মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কিছু ব্যাংকের পরিচালকরাই তাদের ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ নেয়ায় গুণগত ঋণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্তরায় হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এ কারণেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ধারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় এই দুর্বলতার তথ্য আইএমএফের প্রতিবেদনেও ওঠে এসেছে। সংস্থাটি বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়ার প্রবণতা কমাতে হবে। ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম প্রতিবেদন প্রকাশ করতেও বলা হয়েছে।

আইএমএফের শর্তের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর নিলাম প্রতি কার্যদিবস করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে সপ্তাহে দুই দিন রেপোর নিলাম হচ্ছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিনই তারল্য সুবিধা দেয়ার সুযোগ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com