সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভোলার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের পুরাতন ভবনটি। সেখানে ছাদ থেকে মেঝেতে পলেস্তারা ধ্বসে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে রোগী, নার্স ও চিকিৎসদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এক সপ্তাহের মধ্যে তিনবার পলেস্তারা ধ্বসে হাসপাতালের পাঁচ নার্স আহত হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া, মেডিসিন ও সার্জারি ওয়ার্ডের অবস্থা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন নার্স ও রোগীরা।
জানা গেছে, ভোলার উন্নত চিকিৎসার জন্য একমাত্র সেবা প্রতিষ্ঠান সদর হাসপাতাল। এখানে ইনডোরে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক এবং আউটডোরে তিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কিন্তু ৬২ বছরের পুরনো হাসপাতাল ভবনটি এখন অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
রোগীদের অভিযোগ, পুরনো এ ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। বর্তমানে হাসপাতালের অবস্থা আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবন থেকে পলেস্তারা ধ্বসে পড়ার কারণে আতঙ্কিত থাকছেন নার্স ও রোগীরা।
আমজাদ হোসেন নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে আরো ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। কখন আবার ভবন ধ্বসে পড়ে এই ভয়ও মনে কাজ করে সারাক্ষণ।
তাসলিমা বেগম নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে শিশুদের নিয়ে আরো ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
রোগীর স্বজন সাহাবুদ্দিন বলেন, হাসপাতালে এসেছি সুস্থ্য হওয়ার জন্য। কিন্তু হাসপাতালে এসে যদি ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়, তাহলে কিভাবে নিশ্চিতে চিকিৎসা নেব!
হাসপাতালের কয়েকজন নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোগীদেরর সেবা দিতে গিয়ে নিজেদেরই আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন না জানি ছাদ ধ্বসে পরে। এরই মধ্যে তিনজন নার্স আহত হয়েছেন।
নার্সিং স্টুডেন্ট সুইটি আক্তার বলেন, ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকার কারণে রুমের বাইরে মেঝেতে বসে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তারপরেও মনে ভয় কাজ করে।
সিনিয়র স্টাফ নার্স নুরে জান্নাত বলেন, হাসপাতালের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় অনেকেই আতঙ্কে থাকেন। জরুরি ভিত্তিতে ভবন সংস্কার করা প্রয়োজন।
নার্সিং সুপারভাইজার নাসিমা বেগম বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালের ডায়রিয়া, পুরুষ সার্জারি ও মেডিসিন ওয়ার্ডে ছাদের পলেস্তারা ধ্বসে তিনজন নার্স আহত হয়েছেন। জরুরি ভিত্তিতে ভবনটি সংস্কার করা প্রয়োজন। এটি নিয়ে নার্সদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।
হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডের মধ্যে বিশেষ করে ডায়রিয়া, মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন এবং সার্জারী ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুহাম্মদ লোকমান হাকিম বলেন, গণপূর্ত বিভাগকে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হয়েছে। ভবনটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৬২ সালে ১০ শয্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল হাসপাতালটির কার্যক্রম। পরে ১৯৭২ সালে এটি ৫০ শয্যা এবং ২০০০ সাল থেকে ১০০ শয্যায় বর্ধিত করা হয়। আর গত তিন বছর ধরে একই ভবনে চলছে ২৫০ শয্যার কার্যক্রম।