কোনো ডরমিটরি নেই, তাই ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর হেমায়েত উদ্দিন বসবাসের জন্য বেছে নিয়েছেন কলেজের একটি কক্ষকে। এতে হোস্টেল ছাত্রী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
হোস্টেল ছাত্রীদের বেশিরভাগই ক্ষোভ-বিরক্ত প্রকাশ করেছেন। এমনকি ঝালকাঠির স্থানীয় সংবাদপত্রের অফিসে রিজিস্ট্রি ডাকযোগে ‘অধ্যক্ষের হাত থেকে হোস্টেল ছাত্রীদের নিরাপত্তার আবেদন’ বিষয়ে একটি উড়োচিঠি পৌঁছেছে।
অভিযোগে ছাত্রীরা লিখেছেন, ‘আমরা ঝালকাঠি সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আমরা যারা কলেজ হোস্টেলে থাকি তারা হোস্টেল সুপার ও অধ্যক্ষের আচরণে অতিষ্ঠ। কলেজে অধ্যক্ষের বাসভবন না থাকলেও তিনি সবসময় কলেজ ক্যাম্পাসেই থাকেন। যার কারণে আমরা বের হতে পারি না। আপনাদের কাছে প্রশ্ন আমরা কি জেলখানায় থাকি? আর বাসভবন না থাকলেও কি করে থাকে কলেজে?
অধ্যক্ষ ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলেন এবং মুখে যা আসে তাই বলেন। বাবা ও মাকে নিয়েও আজে বাজে কথা বলেন। যা আমরা এখানে লিখতে পারব না। তিনি বাথরুমে গিয়ে আমাদের খোঁজেন। এটা কোন আইনে আছে? আমাদের জীবনে অনেক শিক্ষক পেয়েছি। কিন্তু ওনার মতো শিক্ষক আমরা কোথাও দেখিনি। আমাদের কথা বিশ্বাস না হলে গোপনে সব ছাত্রীদের সাথে কথা বলে দেখুন। আমরা উনার হাত থেকে মুক্তি চাই। ’
ছাত্রীরা এর পর লিখেছেন, ‘অতএব আপনাদের প্রতি আমাদের আবেদন আমরা যাতে হোস্টেলে ভালোভাবে থাকতে পারি তার জন্য আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি। নিবেদক হোস্টেল ছাত্রীরা ঝালকাঠি সরকারী মহিলা কলেজ, ঝালকাঠি। ’
রিজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রেরিত ওই চিঠির খামের উপরে প্রেরক মিতু ইসলাম, ঝালকাঠি সরকারী মহিলা কলেজ রোড, ঝালকাঠি লেখা থাকলেও অভিযোগে নিবেদক কারো নাম লেখা নেই। নিবেদকের শ্রেণি, রোল, বিভাগ অথবা বাবর নাম ও বাসার ঠিকানা কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
এদিকে বেনামি এ উড়ো অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. হেমায়েত উদ্দিন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কলেজ ব্যবস্থাপনায় কঠোর হলেই অভিযোগ দিতে শুরু করে। এসব অভিযোগে কলেজের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ’
কলেজের উপাধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপারসহ অন্যান্য শিক্ষকমণ্ডলীরা অধ্যক্ষের প্রশংসা করে জানান, স্যার নিজের অর্থায়নে হোস্টেলের ছাত্রীদের জন্য বাজার করেন। ছাত্রীদের খাবারের জন্য যে পরিমাণ টাকা নেওয়া হয় (প্রতিদিন একশ টাকা করে) তাতে খরচে সংকুলান হয় না। তাই মাঝেমধ্যে অধ্যক্ষ (স্যার) নিজের টাকা দিয়ে বাজার করান।
অধ্যক্ষ কেন কলেজে থাকছেন প্রশ্নে তারা বলেন, স্যারের বাড়ি বরিশালে থাকলেও কলেজের অবস্থা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুষ্ঠ রাখতে তিনি কলেজের একটি রুমে থাকেন।
ক্যাম্পাসে বসবাসের বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘মহিলা কলেজের ভেতরে অধ্যক্ষের বসবাসের জন্য ডরমিটরি ভবন না থাকলেও অফিস ভবনের একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা আছে। আমি বরিশালের বাসা থেকেই যাতায়াত করি। কিন্তু মাঝেমধ্যে থাকতে হয় ওই কক্ষে। ছাত্রীরা মেয়ের মতো, তাই ওদের ভালো-মন্দ সম্পূর্ণ দেখাশুনা করতে হয়। ’