রমজানের শুরু থেকেই নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক। রোজায় এসে খাবারের দামের এই ঊর্ধ্বমুখী, সারাদেশের ন্যায় ঝালকাঠির মানুষকে আরও কষ্টে ফেলেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। তাই তারা এখন তাকিয়ে থাকেন খোলাবাজার (ওএমএস) ও টিসিবির পণ্যের দিকে। কিন্তু তাতেও নেই স্বস্তি। চাহিদার চেয়ে খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ কম থাকায় অনেকেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি পরপর কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না পণ্য। রমজান উপলক্ষে সারাদেশের সঙ্গে ঝালকাঠিতেও নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ে। চাল, ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ ছাড়াও সবজি, মাছ, মুরগিসহ সব জিনিসের দাম এখন চড়া। এক মাসের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৩-১০ টাকা।
এদিকে চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে গুটি স্বর্ণা চাল প্রতি কেজির দাম ৪০-৪১ টাকা আর পাইজাম ৪৫-৪৬ টাকা। বিআর-২৯ চাল ৪৮-৪৯, বিআর-২৮ চাল ৫৩-৫৪, মিনিকেট চাল ৫৭-৫৮, উন্নত মিনিকেট ৬০-৬১, নাজিরশাইল ৬৬-৬৭, সিদ্ধ কাটারি ৯৩-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরায় আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজিতে। ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। অন্যদিকে খোলাবাজারে (ওএমএস) প্রতি কেজি চাল ৩০ ও খোলা আটা ২৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঝালকাঠিতে টিসিবির ডিলার রয়েছেন ৩৫ জন। পণ্য স্বল্পতার কারণে প্রতিদিন একজন ডিলার পণ্য বিক্রি করছেন। টিসিবির ডিলার পয়েন্টেও বেলা বাড়তেই ভিড় বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ খাদ্যপণ্য না পেয়ে ফিরে যান বলে ভোক্তারা অভিযোগ করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঝালকাঠি শহরের বাসন্ডা (যুব উন্নয়নের সামনে) এবং ফরিয়া পট্টি ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে দেখা গেছে, টিসিবির পণ্য কিনতে হাতে কার্ড নিয়ে অপেক্ষা করছে মানুষ। লম্বা লাইন। কিন্তু পণ্য শেষ হওয়ায় ডিলার দোকানের শাটার বন্ধ করে দিয়েছেন। ক্রেতারা পণ্য না পেয়ে বাইরে হাহাকার করছেন।
তিনি বলেন, ‘ঘরে খাওয়ার লোক চারজন। ওএমএস থ্যাইকা কম দামে চাল-আটা পাইলে কিছু পয়সা বাঁচে। কিন্তু দুই ঘণ্টা লাইনে খাড়াইয়াও হ্যেয়া ক্যেনতে পারি না।
দুপুর ১২টার দিকে শহরের পালবাড়ি এলাকায় ওএমএসের চাল কিনতে লাইনে দাঁড়ানো মধ্যবিত্ত ঘরের এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার স্বামীর বেতনে সংসার চলে না। ছেলেমেয়ে নিয়ে অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তাই কম দামে চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি।
টিসিবির ডিলার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, টিসিবির বরাদ্দ কম থাকায় ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
ঝালকাঠি জেলা খাদ্য কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন জানান, জেলায় ১৭ জন ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ হাজার কেজি (১২ টন) চাল স্বল্পমূল্যে (৩০ টাকা দরে) বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে জেলা শহরে ১০ জন ডিলার থাকলেও সপ্তাহে তিনদিন করে প্রতিদিন পাঁচজন ডিলার একটন চাল ও একটন আটা বিক্রি করছেন। বাকি তিন উপজেলায় স্বল্পমূল্যে শুধু চালই বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে পরিমাণে বরাদ্দ রয়েছে তার চেয়ে চাহিদা অনেক বেশি।