শুক্রবার, ০৭:০০ অপরাহ্ন, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।
শিরোনাম :
গৌরনদীতে নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রাখতে বসানো হল ন্যায্য মূল্যের বাজার অপহরণের ৯ দিনেও খোজ মিলছেনা গৌরনদীর অপহৃতা কিশোরী নন্দিনি’র দেশ নায়ক তারেক রহমানের বিজ্ঞ নেতৃত্বের কারনে আমরা গনঅদ্ভুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি-এম. জহির উদ্দিন স্বপন ভয়াবহ দূষণের কবলে দিল্লি, সকল প্রাইমারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা ইরানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দেখা করলেন ইলন মাস্ক নারী সমর্থনের নামে হলিউডে ভণ্ডামি হয়: সিডনি সুয়িনি কখন ফল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো জয়ের পর প্রথম ভাষণ, যা বললেন ট্রাম্প জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি টিপুকে ধরে পুলিশে দিল জনতা কাকরাইল মসজিদে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার

জেলা পরিষদ নয়, জেলা সরকার প্রয়োজন

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২২
  • ৬৮ বার পঠিত

তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৭টি জেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু যারা নির্বাচিত কিংবা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন, জেলা পরিষদ কী, এর কাজ কী, এর ইতিহাস কী কিংবা জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের পার্থক্য কী ইত্যাদি তারা বুঝেন কি না?

১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে বঙ্গীয় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে প্রথম জেলা বোর্ড গঠন করা হয়। জেলা বোর্ড নির্বাচিত কিংবা মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হতো। লোকাল বোর্ডের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নিজেদের মধ্য থেকে নতুবা বাইরে থেকে নির্বাচিত হতেন। অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ বিভাগীয় কমিশনার মনোনয়ন দিতেন। তারপর জেলা বোর্ডের সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করতেন অথবা প্রাদেশিক সরকার চেয়ারম্যান নিযুক্ত করতেন।

১৯১৯ সালে বঙ্গীয় স্বায়ত্তশাসনের মাধ্যমে জেলা বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে কিছুটা গণতন্ত্র আনয়ন করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে সদস্যরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন এবং সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান এবং এক বা একাধিক ব্যক্তিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করতেন। তখন জেলা বোর্ডের কাজ ছিল- শিক্ষা, গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট, পুল-সাঁকো নির্মাণ, জনস্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশন, ফেরিঘাট ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। তখন জেলা বোর্ডের তিনটি আয়ের ওপর নির্ভর থাকতে হতো- সেস বা ট্যাক্স, বিধান লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা ও সরকারি অনুদান।

 

পাকিস্তান আমলে ১৯৫৯ সালে জেলা বোর্ডের নাম পরিবর্তন করে জেলা কাউন্সিল রাখা হয়। আগের তিনটি আয়ের উৎসের সঙ্গে ফেরি পারাপারে ট্যাক্স আদায় ও মোটর ভেহিক্যাল ট্যাক্স যুক্ত করা হয়। স্বাধীনতার পর জেলা কাউন্সিলের নাম পরিবর্তন করে ‘জেলা বোর্ড’ রাখা হয়। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সরকার স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ‘জেলা পরিষদ’ নাম রাখে এবং নির্বাচিত, অফিশিয়াল এবং মহিলা সদস্যদের সমন্বয়ে জেলা পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করে।

১৯৮৮ সালে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনের মাধ্যমে ২২টি সাবেক জেলায় ‘জেলা পরিষদ’ বিদ্যমান রাখে। জেলা পরিষদের ১২টি আবশ্যিক কাজ ও ৬৯টি ঐচ্ছিক কাজ নির্দিষ্ট ছিল। তখন জেলা পরিষদের যতটুকু কাজ ছিল সে তুলনায় বর্তমানে কিছুই নেই। যাকে স্থানীয় সরকারের আইকন বলা হয় সেই কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীও একসময় জেলা বোর্ডে চাকরি করতেন। ২০০০ সালে ১৯৮৮ সালের জেলা পরিষদের আইন পরিবর্তন করে জেলা বোর্ড রাখা হয়। এ আইনে নির্বাচকমন্ডলীর ভোটে (মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, মেম্বারদের ভোটে) একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য এবং পাঁচজন সংরক্ষিত আসনে মহিলা নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

বর্তমানে জেলার জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচকমন্ডলী নির্ধারিত করা হয়েছে। জেলা পরিষদের পুরুষ সদস্যদের এক তৃতীয়াংশ মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। যেমন, মেহেরপুর দুটি উপজেলা থেকে দুজন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং একজন নারী সদস্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হবেন। আবার পাবনা জেলায় নয়টি উপজেলা থেকে নয়জন পুরুষ সদস্য ও তিনজন মহিলা সদস্য সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হবেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদের কাজ নয়, ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে জেলার এ স্তরটিকে বার বার ব্যবহার করেছে। তবে ১৯৭৫ সালে বাকশাল ব্যবস্থা প্রচলনকালে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “সচিবালয়ে সচিবরা জেলাকে সামনে রেখে উন্নয়ন চিন্তা করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসকদের কাছে পত্র পাঠান। তারা জনগণ থেকে দূরে থাকেন। এখন থেকে সচিবালয়ে শুধু মন্ত্রী আর কয়েকজন সহকারী থাকবেন। সব সচিবকে জেলায় চলে যেতে হবে এবং ডিস্ট্রিক্ট গভর্নমেন্টের অধীনে চাকরি করতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনারা জীবনমুখী আমলা হোন।” তাঁর পদ্ধতিটি সেসময় সময়োপযোগী ছিল। তখন বাংলাদেশ ছিল গ্রামীণ বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশটি নগরমুখী। বর্তমান গতিশীল সমাজকে সামনে করে শাসনব্যবস্থার চিন্তা করতে হবে। এ অবস্থায় দুই ধরনের সরকারব্যবস্থাই সমাধান। জেলা পরিষদ নয়, জেলা সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বার্থ দেখবে। আর জেলা সরকার জেলার যাবতীয় স্থানীয় কাজ (তথা নগরীয় ও গ্রামীণ কাজ) তদারকি ও বাস্তবায়ন করবে। তার আগে জেলা সরকারকে প্রজাতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে। জেলা প্রশাসন, জেলা সংসদ ও জেলা বিচার বিভাগ মিলে ‘জেলা সরকার’ গঠিত হবে। একই পদ্ধতিতে ইউনিয়ন সরকার, নগর সরকার ও উপজেলা সরকার (যদি এ স্তরটির প্রয়োজনীয়তা থাকে) গঠন করতে হবে। শাসনব্যবস্থা হবে বটম-আপ পদ্ধতির। মনে রাখা দরকার, বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে ত্রুটিপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা যদি সর্বস্তরে গণতন্ত্রায়ণ চাই তথা জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসন চাই; অথ্যাৎ আমরা যদি রাজনৈতিক সংকটের স্থায়ী সমাধান চাই তাহলে দুই ধরনের সরকারব্যবস্থার বিকল্প নেই (পুনশ্চ: আবুল মাল আবদুল মুহিত দীর্ঘদিন একাধিক সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ‘জেলায় জেলায় সরকার’ নামে একটি বই লিখেছেন। যদিও তাঁর বইতে জেলা সরকারের কোনো রূপরেখা নেই। তা ছাড়া তিনি জেলা সরকার বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগও নেননি)।

লেখক : গণতন্ত্রায়ণ ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারবিষয়ক গবেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com