সোমবার, ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

জুলাই আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে মুখ খুললেন কামাল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

গত বছর জুলাইয়ে সংঘটিত ছাত্র-জনতা আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা। কেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আর ভবিষ্যতে কী করা উচিত সে ব্যাপারেও বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাক্ষাতকার তুলে ধরা হলো

প্রশ্ন: চলমান পরিস্থিতি থেকে আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে? দলটির পুনরুত্থান কীভাবে হবে?

উত্তর: আমি ১০ বছর ছয় মাস বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম। এ সময়ের মধ্যে আমি বহু উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করেছি…। এখন সবকিছু ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে উল্টে গেছে। গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে থাকেন সেই গণভবন থেকে এসএসএফের (ভিভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বপালনকারী বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী) অস্ত্রও কেড়ে নেয়া হয়। আমি নিজে ৫ এবং ৬ আগস্ট ঢাকায় ছিলাম; পরে ৭ আগস্ট আমার বাড়ি ছাড়ি।

প্রশ্ন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। আপনি কি এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না?

উত্তর: যখন থানাগুলো পুড়েছে কার্যত পুলিশ তখন অকার্যকর হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে মৃতদের সাক্ষী করে তাদের মৃতদেহ গণনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যেখানে পুলিশ সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা দেয় সেখানে তারা যখন নিজেরাই অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে বিষয়টা কেমন হয়? আমি বলবো সেখানে যৌথ অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে। ইসলামী উগ্রবাদ এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থান।

প্রশ্ন: স্পষ্টতই এখানে গোয়েন্দাদের বড় রকমের ব্যর্থতা ছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনি কি এ বিষয়টি স্বীকার করেন?

উত্তর: হ্যাঁ আমি এ বিষয়ে একমত যে, ইচ্ছাকৃত হোক বা অন্যভাবেই হোক গোয়েন্দাদের বিশাল ব্যর্থতা ছিল। সেনাবাহিনীর বিশেষ একটি গোয়েন্দা ইউনিট রয়েছে, ডিজিএফআই (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)। তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। এমনকি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করে। গোয়েন্দাদের রিপোর্টের সারসংক্ষেপটাই শুধু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসে।

প্রশ্ন: আপনি কি স্বীকার করেন যে, আপনার দল কিছু মৌলিক ভুল করেছে; যার ফলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর: আমি বিষয়টিকে ভুল বলবো না, তবে হ্যাঁ, দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এটাই মূল কথা। দুই বছর পর নতুন নেতাদের আসার কথা ছিল। কিন্তু আমরা যথাসময়ে নেতা নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছি।

প্রশ্ন: আপনার দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কি আপনার যোগাযোগ হচ্ছে?

উত্তর: তার সঙ্গে দেখা করতে পারছি না; তবে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তিনি দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। ৪ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আমি তার সঙ্গেই ছিলাম। পুলিশের প্রধানও ছিলেন সেখানে। সেনাপ্রধানও সেখানে ছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, কিছুই হবে না। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। সেনাপ্রধান বলেছিলেন আপনার সুরক্ষার দায়িত্ব আমার জিম্মায়। এসব কিছুর সাক্ষী আমি নিজে। তখন আমি সেনাপ্রধানকে জিজ্ঞেস করেছি- আপনি কি সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন? তিনি জবাবে হ্যাঁ বলেছিলেন। এরপর আমি আমার অধীনে থাকা পুলিশ প্রধানকে সেনাপ্রধানের সঙ্গে স্বাধীনভাবে আলোচনা করার কথা বলেছি। তারা যেন সব স্বাভাবিক করে। কিন্তু আপনি দেখেছেন ৫ আগস্ট কী হয়েছে।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলাতক আছেন; অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক। তাদের মনোবল ধরে রাখতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?

উত্তর: আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল অনেক উঁচু। শেখ হাসিনা ছাড়া তারা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে না। তিনিই বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি অর্থনীতির পরিবর্তন করেছেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলার পরিবর্তন করেছেন।

প্রশ্ন: আপনি ভারতের কাছ থেকে কী আশা করছেন? ভারত কীভাবে সাহায্য করতে পারে?

উত্তর: আমি মুক্তিযোদ্ধাদের একজন কমান্ডার ছিলাম, তাই আমি জানি ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের জন্য কী করেছে। আমি স্বীকার করি যে, ভারত সব সময় বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সেখানে ছিল। এখন ভারত কূটনৈতিকভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা আদালতে যেতে পারছেন না। নতুন করে বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমত, আদালত যাতে পুনরায় কাজ শুরু করতে পারে, সেজন্য কূটনৈতিক চাপ এবং এর পক্ষে আওয়াজ উত্থাপন করা উচিত। আমি মনে করি ভারত এভাবে সাহায্য করতে পারে।

প্রশ্ন: আপনার পরিবার এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ কী?

উত্তর: আমার একমাত্র ছেলে বর্তমানে জেলে…আমার অনেক আত্মীয়স্বজনও ভালো অবস্থায় নেই। আমার ছেলে কাশিমপুরের একটি কারাগারে রয়েছে; যেখানে আমরা একসময় সন্ত্রাসীদের আটক রাখতাম। কয়েকদিন পরপরই ছেলের কাছে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কেউ না কেউ আমার অবস্থান জানতে চায়। এ ছাড়া আমার ওপর একের পর এক মামলা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে প্রায় ২৯০টি খুনের মামলা হয়েছে। এটি নিশ্চয়ই একটি রেকর্ড, হয়তো আন্তর্জাতিক রেকর্ডও। ৫৪টি মামলায় যাকে খুন করার কথা বলা হয়েছে তিনি জীবিত ফিরে এসেছেন…সেই মামলাগুলোতে, আমার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতার নামও রয়েছে।

প্রশ্ন: আপনি কি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে আইনের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত? এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কি নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত?

উত্তর: আমি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছি না। তবে তা কেবল তখনই সম্ভব যখন আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা হবে, বিচারকরা অবাধে এবং নির্ভয়ে মামলার শুনানি করতে পারবেন এবং আমাদের আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে উপস্থিত হতে পারবেন। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি, আমরা অবশ্যই নির্বাচনে লড়বো যদি আমরা সবাই সেখানে যেতে পারি…।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনা নির্বাসিত। দলের বেশির ভাগ নেতাও এখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে শক্তিশালী করাটা কতোটা চ্যালেঞ্জের বলে আপনি মনে করেন? 

উত্তর: এটা অসম্ভব নয়। আমি বিশ্বাস করি- এটা সম্ভব। আমার বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তা বদলে যাবে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমি সেখানকার পরিস্থিতি দেখেছি। সেখানকার জনগণকে দেখেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা খুব শিগগিরই চলমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবো। যদিও অনেক নেতার সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো খোঁজ নেই…। তবে যদি লড়াই শুরু করি তারা পুনরায় ফিরে আসবেন। আমার বয়স ৭৫ হতে চলেছে, আমি বিশ্বাস করি যে, আমি এখন বোনাস জীবনে আছি। সেজন্য আমি ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের তরুণ নেতারাও এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। তরুণদের এগিয়ে আসার সময় এসেছে।

প্রশ্ন: চলমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা কী?

উত্তর: গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে এখন তাদের (অন্তর্বর্তী সরকারের) নিয়ন্ত্রণে। গণমাধ্যম কোনো বিষয়ে স্বাধীনভাবে মন্তব্য করতে পারছে না। তারা সবকিছুর জন্য আওয়াজ তুলতে পারে না। তারা এখন নীরব। আমি বিশ্বাস করি যদি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে এগিয়ে আসতে বলেন, তাহলে অবশ্যই সেটা ঘটবে।

প্রশ্ন: শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সময় তার কাছ থেকে কী নির্দেশনা পেয়েছেন?

উত্তর: তিন দিন আগে আমি তার সঙ্গে কথা বলেছি। তার নির্দেশনা হচ্ছে- সকল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে; যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা যায়।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আপনার বার্তা কী?

উত্তর: তার চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই, তিনি কোনো নেতা নন, কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিও নন। দেশে খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ড. ইউনূসের উচিত তার পদ ছেড়ে আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে লড়তে দেয়া এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার সুযোগ করে দেয়া। কেননা, এটাই একমাত্র উপায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com