কয়েক মাস ধরে যুগপৎ আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে ২৪ মে থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত দলটি প্রথম দফায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে। ওই সময় বাম দলগুলো বিশেষ করে সিপিবি ও বাসদের সঙ্গে বসার আগ্রহ দেখালেও ইতিবাচক সাড়া পায়নি বিএনপি। গতকাল রবিবার দ্বিতীয় দফায় আবারও সংলাপ শুরু করেছে দলটি। প্রথম দিন বসেছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে। এবার বাম রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করতে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা মনে করেন, জামায়াতের সঙ্গে সখ্যতার কথা বলে দেশে-বিদেশে বিএনপির নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। তারা এ অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে চান। এ কারণে যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের চেয়ে বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে সংলাপেও বসতে চান না তারা। বিএনপির ‘বামঘেঁষা’ নেতারা আশা করছেন, বাম রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবার তাদের সংলাপ হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও সংলাপে আগ্রহ রয়েছে দলটির।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ৯ দফা দাবি সম্পর্কিত রূপরেখার খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এগুলো হলো- ১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বাতিল ও সরকারের পদত্যাগ; ২. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন; ৩. বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্র্বাচন অনুষ্ঠানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল, ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল; ৪. বেগম খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক, আলেমদের সাজা বাতিল, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি; ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-সহ সব কালাকানুন বাতিল; ৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ সেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা এবং বাজার সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে; ৮. গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থপাচার, রাষ্ট্রীয় সব সেক্টরের দুর্নীতি চিহ্নিত করতে কমিশন গঠন এবং ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল, মন্দির ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এই ৯ দফা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সামনে তুলে ধরছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপেও তুলে ধরা হয়েছে। চলতি মাসে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শেষ করতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছাড়া বিকল্প নেই। এ জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি। রাজপথে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন আমাদের টার্গেট।
জামায়াত নিয়ে টুকুর বক্তব্য আজ উঠতে পারে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জামায়াত নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর প্রকাশ্য বক্তব্যে দুদলের মধ্যে ‘মনমালিন্য’ তৈরি হয়েছে। টুকুর ওই বক্তব্যের পর গত সোমবার থেকে দুদলের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উভয় দলের নেতারা মনে করেন যুগপৎ আন্দোলনে এর প্রভাব পড়বে। সে জন্য উভয় দলের নেতারা বৈঠকে বসতে পারেন। আজ সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
জামায়াতের দুই নেতা বলেন, বিএনপি যদি তাদের সঙ্গে বসে, তা হলে তারা টুকু সাহেবের বক্তব্য নিয়ে কথা বলবেন। এটি বিএনপির দলীয় বক্তব্য কিনা, সেটিও জানতে চাইবেন। যুগপৎ আন্দোলনের ভাবনা থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে বিএনপি ও জামায়াত একে অপর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। এর মধ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বক্তব্যে জামায়াত ও বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে জামায়াত ও বিএনপি জোটবদ্ধভাবে পথ চলছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘গত সোমবার রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপি সমাবেশে আমার পুরো বক্তব্য ছিল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে। জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ্য করে নয়। আমি জামায়াত নিয়ে কিছু বলিনি। বরং তাদের সাপোর্ট করেছি। এ নিয়ে জামায়াত বিবৃতি দিয়ে তারা অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছে।’
টুকুর বক্তব্যে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘টুকু যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটি তার ব্যক্তিগত, বিএনপির দলীয় বক্তব্য নয়। টুকুর বক্তব্যকে জামায়াত কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্ঠাচারবহির্ভূত মনে করে। আমরা মনে করি, ভবিষ্যতে টুকুসহ সবাই বক্তব্যে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন।’