ক্যানসার শরীরের যে কোনো অঙ্গে, যে কোনো বয়সী নারী-পুরুষের হতে পারে। এটি একটি ক্ষত, টিউমার অথবা অদৃশ্য রক্তের শ্বেতকণিকায় হতে পারে। ক্যানসার সৃষ্টি হয় মাত্র একটি কোষ থেকে। এ কোষের মূল উপাদান হলো ক্রোমোজম। এ ক্রোমোজমের মধ্যে আছে অসংখ্য জিন। প্রতিটি জিন একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রক্ষা করে বা কর্মসম্পাদনের জন্য দায়ী থাকে। এমন একটি জিন হলো প্রটোঅনকোজিন। আরেকটি হলো ক্যানসার সাপ্রেসরজিন। সাপ্রেসরজিন কাজ করে শরীরে যাতে ক্যানসার হতে না পারে, সে জন্য। প্রটোঅনকোজিন অনকোজিন হওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কোনো কারণে যদি ক্যানসার সাপ্রেসরজিন কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে বা প্রটোঅনকোজিন অনকোজিনে রূপান্তরিত হয়ে যায় অথবা উভয় প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে, তা হলে অনকোজ বা টিউমার অথবা নিওপ্লাসিয়া কিংবা ক্যানসার সৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।
নারীরা যত ধরনের ক্যানসার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, জরায়ুমুখের ক্যানসার সেসবের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। এটিই একমাত্র ক্যানসার, যা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা যায় এবং এই পরীক্ষাটি করা যায় বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো শহরে, এমনকি গ্রামেও করা যাচ্ছে এখন। গ্রামে VIA, শহরে Pap’s Smare, LBC লিকুইড বেসড সাইটোলজি, Colposcopy ইত্যাদির মাধ্যমে পরীক্ষাটি করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে এ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়। প্রাথমিক পর্যায় থেকে ক্যানসারে রূপান্তরিত হতে ১০-১২ বছর সময় লাগে। এই ক্যানসার জীবনের দুই পর্যায়ে হতে পারে বলে গবেষকরা তা প্রমাণ করেছেন। সাধারণত বয়স ৩৫-৩৯ বছর এবং ৬০-৬৯ বছর বয়সে ক্যানসারটি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
রোগের লক্ষণ : দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া। অনিয়মিত মাসিক হওয়া। সহবাসে রক্ত যাওয়া। মেনোপজ হওয়ার পর রক্ত যাওয়া। তলপেটে ব্যথা।
যারা বেশি ঝুঁকিতে : জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ১০ বছরের বেশি খাওয়া। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া। অল্প বয়সে সন্তান প্রসব করা। ঘনঘন এবং ৫ জনের বেশি সন্তান প্রসব করা। ডে লেবারের স্ত্রী। বিবাহবর্হিভূত শারীরিক সম্পর্ক থাকা।
রোগ শনাক্তকরণ : সুস্থ নারীরা স্ক্রিনিং করুন। বায়োপসি (ঈবৎারপধষ ঞঁসড়ৎ) ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করুন। গজও ড়ভ পেলভিস করাবেন, যাতে প্রাথমিক ও অ্যাডভান্স পর্যায় সহজেই জানা যায়।
চিকিৎসা : চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের পর্যায়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রথমে সার্জারি, পরে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি। অ্যাডভান্স পর্যায়ে প্রথমে ঈঈজঞ ক্যামোরেডি ও রেডিওথেরাপি। অনেক সময় কেমোথেরাপির পর সার্জারিও করা হয়। এই দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি হলো (রেডিওথেরাপি) ঊইজঞ পেটের ওপর দিয়ে জঞওঈজঞ এবং জরায়ুর ভেতরে জঞ.
প্রতিরোধের উপায় : প্রাইমারি পর্যায়েই প্রতিরোধ করুন। এজন্য ঐচঠ ভেক্সিনেশন নিন। ৯-৪৫ বছর পর্যন্ত সব সুস্থ মেয়ে ও নারী এটি নিতে পারেন। সেকেন্ডারি প্রিভেজশনে সুস্থ নারীরা ৩০ বছর বয়স থেকে স্ক্রিনিং করবেন। টাবশিয়ারি প্রিভেনশনে ক্যানসার নির্ণয়ের পর যথাযথ চিকিৎসা করুন।
লেখক : স্ত্রীরোগ, প্রসুতি ও স্ত্রীরোগ ক্যানসার ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন এবং কনসালট্যান্ট, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা। চেম্বার : আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা। হটলাইন : ১০৬৭২