পিতা না হয়েও পিতার দায়িত্ব পালন করলেন গরীবের জেলা প্রশাসক, জসীম উদ্দীন হায়দার। আজ ২৯ অক্টোবর, শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের আয়োজনে বরিশাল নগরের রূপাতলীতে অবস্থিত সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সামাজিক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি ও তানজিলার বিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক, বরিশাল জসীম উদ্দীন হায়দার। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান অতিথি রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল মোঃ আমিন উল আহসান, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কর কমিশনার তাসনিমা হোসেন লুনা, কর কমিশনার কাজী লতিফুর রহমান, বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, ভোলার জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান, পরিচালক, বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়, বরিশাল উপপরিচালক মোঃ শহিদুল ইসলাম, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকুদারসহ প্রমুখ। বিয়ের অনুষ্ঠানে তরুণী তানজিলা আক্তার এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তারকে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম দুটি অটোরিকশা উপহার প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে ৩ শতাধিক অতিথিদের আপ্যায়ন করান সাধারণ সম্পাদক, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাব এস এম জাকির হোসেন। বিয়েতে তাদের নতুন জীবনের জন্য গৃহস্থালী কাজের জন্য বিসিসির পরিচালক আলমগীর খান আলো, সমাজসেবক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন ৩০ হাজার টাকা উপহার প্রদান করেন। মেয়েদের বিয়ের শাড়ি দেন সিনিয়র সহসভাপতি জেলা আওয়ামী লীগ বরিশাল মোঃ হোসেন চৌধুরী। এছাড়া মেয়েদের জন্য সেলাই মেশিন ও অন্যান্য উপকরণ প্রদান করেন জেলা প্রশাসন ও সমাজসেবা অধিদপ্তর। তিন বছর আগে বিভিন্ন কারণে পরিবার ও সমাজ থেকে দূরে চলে আসা ১৯ বছরের তরুণী তানজিলা আক্তার এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তার আশ্রয় নেয় বরিশালের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সামজিক প্রতিবন্ধী সেন্টারের নিবাসী তানজিলা আক্তারের বাড়ি শরীয়তপুরের গোসাইর হাট উপজেলার তুলাতলি এলাকায় আর সৃষ্টি আক্তারে বাড়ি বরিশাল সদর উপজেলার পলাশপুর এলাকায়। তিন বছর আগে সামাজিক প্রতিবন্ধী এই দুই জন প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসেন। এরপর থেকে তাদের সেলাইসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এখানে।
আর সর্বশেষ আজ আনুষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে তাদের বিয়ে দেওয়া হলো। তিনি বলেন, একটি পরিবারের সন্তানকে যেভাবে বিয়ে দেওয়া হয়, সেভাবেই তানজিলা ও সৃষ্টির বিয়ের সব আয়োজন করা হয়। পাত্র দেখা থেকে শুরু করে, গায়ে হলুদ, বিয়ের মূল অনুষ্ঠান সবকিছুই জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়েছে। ফলে কোনো কিছুর কমতি না রেখে পুরো সেন্টারেই এখন বিয়ের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সামাজিক প্রতিবন্ধী তানজিলা আক্তার কথা বলা থেকে সবকিছু স্বাভাবিকভাবে করতে পারলেও সে বিয়ে করছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার নগরবাড়ী গ্রামের কৃষক ও বাকপ্রতিবন্ধী মো. রেজাউল সরদারকে। আর বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সৃষ্টি আক্তার বিয়ে করছেন বরিশালের উজিরপুরের দক্ষিণ মোরাকাঠি এলাকার বাসিন্দা ও অটোরিকশাচালক ওবায়দুল মৃধাকে। যে কিনা স্বাভাবিক একজন মানুষ।
তবে উভয় দম্পতিই এ বিয়েতে বেশ খুশি। তিন লাখ টাকা করে দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বিয়েতে দুটি মেয়ের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং দুই ছেলের পরিবারসহ শতাধিক বরযাত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।