১৮৯৬ সালে শুরু হয় অলিম্পিক গেমস। এই গেমসকে অনুসরণ করেই একে একে এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস, প্যান আমেরিকান গেমস, আফ্রিকান গেমস, প্যান আরব গেমস ও প্যাসিফিক গেমস যাত্রা শুরু করে। এদের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট ইসলামী সলিডারিটি গেমস। ২০০৫ সালে শুরু হওয়া ইসলামী সলিডারিটি গেমস এবার তুরস্কের কোনিয়া শহরে পার করলো পঞ্চম আসর। আদলে এটি চতুর্থ আসর। ২০০৯ সালে ইরানে হওয়ার কথা ছিল দ্বিতীয় আসর। পরে তা পিছিয়ে ২০১০ সালে নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি ইরানের সাথে অন্য আরব দেশগুলোর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে। ২০০৫ সালে সৌদি আরবের মক্কায় প্রথম এই গেমস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৩ সালে ইন্দোনেশিয়ার পালেংবামে এবং ২০১৭ সালে আজারবাইজানের বাকু ছিল যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ ইসলামী সলিডারিটি গেমসের আয়োজক। ২০২৫ সালে ক্যামেরুনের ইয়াউন্ডিতে বসবে ৬ষ্ঠ আসর। তবে ইসলামী সলিডারিটি গেমসের জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে।
চার মহাদেশের ৫৪টি দেশের অংশ গ্রহণে নয়দিন ব্যাপী এবারের কোনিয়া গেমস অনুষ্ঠিত হলো। ২০০৫ সালের প্রথম গেমসেও ছিল ৫৪টি দেশ। আর ২০১৩ সালে ৫৭টি দেশের উপস্থিতি। বাকু গেমসেও ছিল ৫৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব। আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপের মুসলিম দেশ এবং দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশ গায়ানা ও সুরিনাম দেশই এই গেমসের সদস্য। যেসব দেশ অর্গানাইজেশন অব ইসলামী কনফারেন্সের (ওআইসি) সদস্য তারাই সলিডারিটি গেমসে অংশ নিচ্ছে। ইউরোপের মুসলিম দেশ আলবেনিয়া ওআইসি’র সদস্য হলেও অপর দুই মুসলিম দেশ বসনিয়া- হর্জেগোভিনিয়া এবং কসোভো এখনো ওআইসি’র সদস্য হয়নি। তাই ইসলামী সলিডারিটি গেমসে নেই এই দুই ইউরোপিয়ান মুসলিম দেশের উপস্থিতি।
উল্লেখ্য ওআইসি’র সদস্য দেশ ৫৭টি।
১৯৮১ সালের ওআইসি সম্মেলনে এই ইসলামী সলিডারিটি গেমস আয়োজনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন সৌদি আরবের প্রিন্স ফয়সাল বিন ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ। সেই ধারাক্রমে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু এই গেমসের। সে বছর অবশ্য মুসলমানদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের ক্রীড়াবিদরা অংশ নিতে পারলেও নিষিদ্ধ ছিল মহিলা ক্রীড়াবিদরা। ২০১৩ সালের পালেংবামে অন্তর্ভূক্ত হন মহিলা ক্রীড়াবিদরা। সে গেমসে অবশ্য বীচ ভলিবলে মহিলাদের পোষাক নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়।
মানের দিক থেকে এখনো কমনওয়েলথ গেমস বা এশিয়ান গেমসের কাছাকাছি যেতে পারেনি ইসলামী সলিডারিটি গেমস। মানের দিকে অলিম্পিক গেমসের পরেই এশিয়ান গেমসের অবস্থান। তবে অংশ নেয়া দলের সংখ্যার তুলনা করলে অলিম্পিক গেমসের পরেই আছে ইসলামী সলিডারিটি গেমস। ১৯৫১ সালে যাত্রা শুরু করা এশিয়ান গেমসে ৪৬ দেশের প্রতিনিধিত্ব। ১৯৩০ সালে মাঠে নামা কমনওয়েলথ গেমসে ৫৬টি দেশ অংশ নেয়। ১৯৬৫ সালে শুরু হওয়া প্যান আফ্রিকান গেমসে ৫৩ দেশ অংশ নিচ্ছে। প্যান আমেরিকান গেমসে খেলে ৪১টি দেশ। যার যাত্রা শুরু হয় ১৯৫১ সালে। এ ছাড়া ১৯৬৩ সালে শুরু হওয়া প্যাসিফিক গেমসে ২৪টি দেশ এবং ১৯৫৩ সালে শুরু হওয়া আরব গেমসে ২১টি দেশ তাদের দল পাঠাচ্ছে। অবশ্য ইসলামী সলিডারিটি গেমসের ১০ বছর পর ২০১৫ সালে শুরু হয় ইউরোপিয়ান গেমস। এতে ৫০টি দেশ অংশ নিয়েছে।
ইসলামী সলিডারিটি গেমসের আগে ১৯৯৩ সালে শুরু হয়েছিল মহিলা ইসলামী গেমস। ইরান এই গেমসের প্রবর্তক। ২০০৫ সাল পর্যন্ত তেহরানে মোট চারবার হয়েছিল মহিলা ইসলামী গেমস। এই গেমসে বাংলাদেশ দুটি স্বর্ণ, চারটি রৌপ্য ও পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিল। ১৯৮০ সালে তুরস্ক আয়োজন করেছিল ইসলামী গেমসের। সে আসরে ৪২টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অংশ নিয়েছিল মাত্র ১০টি দেশ।
তবে অলিম্পিক, এশিয়াড বা কমনওয়েলথ গেমসের মতো বাংলাদেশে অতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি ইসলামী সলিডারিটি গেমস। অন্যান্য দেশেও তাই।
আজারবাইজানের ফেন্সিং ফেডারেশনের কর্মকর্তা জিয়া আহমাদভের মতে, ‘দুঃখজনকভাবে ইসলামী সলিডারিটি গেমস ততোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি যতোটা হওয়া উচিত ছিল।’
অবশ্য উজবেকিস্তানের অ্যাথলেট ইলিয়াস মোউনা জানান, ‘আমাদের দেশে এই গেমস ব্যাপক জনপ্রিয়।’ তবে মানের দিক থেকে তিনি এশিয়াডের পেছনেই রাখলেন সলিডারিটি গেমসকে।
তার মতে, এই গেমসে চীন, জাপান, কোরিয়া নেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশও এই বাইরে। তাই সলিডারিটি গেমসকে আমি সেই কাতারে নিচ্ছি না।’
ইরানের ক্রীড়াবিদ মুমিন মেকমিনহান এ জন্য আরো যত্নবান হতে বললেন মুসলিম দেশগুলোকে।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচীব সৈয়দ শাহেদ রেজার মতে, ‘মাত্র পঞ্চম আসর হলো ইসলামী সলিডারিটি গেমসের। অন্য গেমসগুলোতো বহু বছর আগে শুরু হয়েছে। জনপ্রিয় হতে তো আরো সময় দিতে হবে। এরপরও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এই গেমসের।’
তবে সলিডারিটি গেমসকে খুবই উঁচু মানের বলে স্বীকৃতি দিলেন উজবেকিস্তানের ভেনিজুয়েলার ফেন্সিং কোচ হোসে গ্রেগারিও। তার মতে, আমি প্যান আমেরিকান গেমস দেখেছি। আফ্রিকান গেমসেও উপস্থিত ছিলাম। আমার অভিমত সলিডারিটি গেমস অনেক হাই কোয়ালিটির।