সম্প্রতি বেড়ে গেছে চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা। কিন্তু এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সতর্কতা প্রয়োজন। চোখ উঠলে কখনো এক চোখ, কখনো দুচোখই জ্বালাপোড়া করে এবং লাল হয়ে চোখ ফুলে ওঠে। চোখজ্বলা, চুলকানি, খচখচে ভাব থাকা, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখে বারবার সাদা ময়লা আসা, কিছু ক্ষেত্রে চোখে তীব্র ব্যথা এ রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। অ্যালার্জিসহ নানা করণে চোখ উঠে থাকে। ভোগায় অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিসে।
কনজাংটিভাইটিস কী : চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশনের নামই কনজাংটিভাইটিস। এটি অতিমাত্রায় ছোঁয়াচে রোগ। কনজাংটিভা নামে চোখের পর্দায় প্রদাহ হলে তাকে বলে চোখ ওঠা রোগ। গরম ও বর্ষাকালে এ রোগ বাড়ে। ব্যাকটেরিয়া ও অ্যালার্জির কারণে চোখ ওঠে।
উপসর্গ : সবগুলো উপসর্গ এক সঙ্গে দেখা দিতে পারে, নাও দিতে পারে। যেমনÑ চোখের চারপাশে হালকা লাল রঙ হতে পারে। চোখের পাতা ফুলে যেতে পারে। জ্বালাপোড়া করতে পারে। চোখের ভেতর অস্বস্তি ও ব্যথা শুরু হতে পারে। রোদে বা আলোয় তাকাতে কষ্ট হয়। চোখ থেকে অতিমাত্রায় পানি পড়ে। চোখ থেকে শ্লেষ্মাজাতীয় পদার্থ বের হতে থাকে। হলুদ রঙের পুঁজ সৃষ্টি হয়। ঘুম থেকে ওঠার পর চোখের পাতা দুটি একত্রে লেগে থাকে।
চোখ উঠলে করণীয় : বেশি ছোঁয়াচে হওয়ায় রোগীকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া উচিত নয়। পরিষ্কার কাপড় অথবা টিস্যু দিয়ে চোখের কোণে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে হবে এবং যতটা সম্ভব ওই কাপড় গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। অন্য চোখেও যাতে এ রোগ না হয়, সেজন্য যতটা সম্ভব ভালো চোখে হাত না দেওয়াটা মঙ্গলজনক। তবে সাধারণত এ রোগে একইসঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুচোখই আক্রান্ত হয়। রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর বালিশের কভার, তোয়ালে ইত্যাদি গরম পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এ ধরনের চোখ ওঠায় অ্যান্টিভাইরাল সাধারণত কাজ করে না। ভাইরাস আক্রমণের ৭-৮ দিনের মধ্যে রোগ সেরে যায়। আক্রান্ত চোখ নোংরা পানি, ধুলাবালি, দূষিত বাতাস থেকে নিরাপদে রাখতে হবে। বাইরে বের হলে সানগ্লাস পরতে হবে। যে পাশের চোখ উঠবে, সে পাশেই কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে। নইলে আক্রান্ত চোখ থেকে অন্য চোখেও সংক্রমণ হতে পারে। চোখে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে পরিষ্কার করা বা চোখে পানির ঝাপটা দেওয়া যাবে না। এতে যদি ভালো না হয় বা যদি চোখে কোন জটিলতা, যেমন চোখ খুব বেশি লাল হয়ে উঠলে বা খুব বেশি চুলকালে, অতিরিক্ত ফুলে গেলে অথবা দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ