গ্লুকোমা চোখের জটিল রোগ। এ রোগে চোখের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। একসময় রোগী অন্ধত্ববরণ করে। ধৈর্য ধরে সময়মতো চিকিৎসা করলে অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চ চাপ এজন্য দায়ী বলে মনে করা হয়।
রোগের কারণ : সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। চোখের উচ্চ চাপ প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও রোগটি হতে পারে। সাধারণত চোখের উচ্চ চাপ ক্রমে চোখের স্নায়ুর ক্ষতি করে এবং দৃষ্টি ব্যাহত করে। কিছু কিছু রোগের সঙ্গেও এ রোগের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে তা হলো- পরিবারের অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের (মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা, মামা, খালা, ফুপু) এ রোগ থাকা। চল্লিশ বা তদূর্ধ্ব বয়স। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। মাইগ্রেন নামক মাথাব্যথা। রাতে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন। স্টেরোয়েড দীর্ঘদিন সেবন করা। চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে। চোখের অন্যান্য রোগের কারণে। জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কেবল চোখের উচ্চ চাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
লক্ষণ : অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এ রোগের কোনো লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চোখ পরীক্ষাকালে হঠাৎ করে চিকিৎসক এ রোগ নির্ণয় করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেসব লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে তা হলো- ঘন-ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া। চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা। ঘন-ঘন মাথাব্যথা বা চোখব্যথা হওয়া। দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যাপ্তি কমা। মৃদু আলোয় কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া। ছোট শিশু অথবা জন্মের পর চোখের কর্নিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্নিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
যাদের চোখ পরীক্ষা জরুরি : পরিবারের কারও এ রোগ আছে। চল্লিশোর্ধ্ব প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, বিশেষ করে যাদের ঘন-ঘন চশমা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। চোখে যারা মাঝে মধ্যে ঝাপসা দেখেন বা ঘন-ঘন চোখ ব্যথা বা লাল হওয়া অনুভব করেন। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইগ্রেন ইত্যাদি রোগ আছে। যারা চোখে দূরের জন্য মাইনাস গ্লাস ব্যবহার করেন।
চিকিৎসা : গ্লুকোমা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব কিন্তু নিরাময় সম্ভব নয়। এ রোগে দৃষ্টি যতটুকু হ্রাস পেয়েছে, তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। দৃষ্টি যাতে আরও কমে না যায়, সেজন্য চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে প্রচলিত তিন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। যেমন- ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা। লেজার চিকিৎসা। শৈল্যচিকিৎসা বা সার্জারি। যেহেতু চোখের উচ্চ চাপ এ রোগের প্রধান কারণ, তাই ওষুধের দ্বারা চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। একটি ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে একাধিক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে এবং তিন মাস পর পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে নিয়মিত কতগুলো পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা।
রোগীর করণীয় : চিকিৎসক যে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন, তা নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। সময়মতো চোখের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। পরিবারের সবার চোখ পরীক্ষা করিয়ে গ্লুকোমা আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে হবে। গ্লুকোমার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার করে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চললে গ্লুকোমায় আক্রান্ত রোগী তার স্বাভাবিক দৃষ্টি নিয়ে বাকিটা জীবন সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারবেন।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট এবং গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, শান্তিনগর, ঢাকা।