বলা চলে বাংলা ব্যান্ডের দুনিয়ায় রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছিল একটি ব্যান্ড। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় ব্যান্ডটির নাম ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। যাদের গান প্রজন্মের পর প্রজন্ম আজও গেয়ে চলেছেন সকলে। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ আসলে কয়েক প্রজন্মের জন্যই একটি আবেগের নাম।
১৯৭৫ সালে তৈরি হয় বাংলার প্রথম এই রক ব্যান্ডটি। মাঝে ৪৭ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আজও এই ব্যান্ডের গানগুলোর জনপ্রিয়তা হারায়নি। এই ব্যান্ডে গানের স্রষ্টাদের অধিকাংশই পাড়ি দিয়েছেন অজানার দেশে। এবার সেই দলে নাম লেখালেন বাপিদাও।
কিংবদন্তি বাংলা ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র বাপিদা ওরফে তাপস দাস। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। অবশেষ ভক্তদের বিদায় জানিয়ে পাড়ি জমালেন না-ফেরার দেশে। তবে স্রষ্টারা চলে গেলেও তাদের কীর্তি আজও অমলিন।
বাংলা গানের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছিল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। আমূল পরিবর্তন এনেছিল ব্যান্ডটি। যাদের গান আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে। যে প্রজন্ম তাদের পারফরম্যান্স কোনো দিন স্টেজে দেখেনি, তাদেরও একটা বড় অংশ এই ব্যান্ডের ভক্ত। সেই দল হলো এক এবং একমাত্র ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতেই খবর পাওয়া গিয়েছিল তাপস দাস মারণ রোগ ক্যান্সারে ভুগছেন। প্রিয় বাপিদার অসুস্থতার খবর শোনামাত্র তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন দুই বাংলার সংগীতশিল্পীরা। তাপস দাসের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে তৈরি হয় তহবিল। ‘ফসিলস’ থেকে ‘বর্ণ অনন্য’, শিল্পীরা চিকিৎসার খরচ জোগাতে একাধিক কনসার্টের আয়োজন হয় শহরেই। পরে অবশ্য তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করে রাজ্য সরকার। এসএসকেএম হাসপাতালেই চলছিল শিল্পীর চিকিৎসা। লাং ক্যান্সারের তৃতীয় স্টেজে ছিলেন তিনি।
তবে তার প্রাণশক্তি যে কতটা ছিল সেটা সকলেই জানেন। একদিকে যখন এই মারণব্যাধি তার বুকে থাবা বসিয়েছে, জীবনে বহু বিচ্ছেদ যন্ত্রণা সয়েছেন, তখনো কিন্তু তিনি শেষদিন পর্যন্ত গানকে ছাড়েননি। চলে যাওয়ার কয়েক মাস আগে পর্যন্ত তিনি মঞ্চে উঠে গান গেয়েছেন। নাকে-মুখে নল লাগানো, তবু চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়া সংগীত মেলায় তিনি ভালোবাসো গানটি গেয়ে আবার দর্শকদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
গান থেকে এই সমস্ত স্মৃতিই ভক্তদের জন্য রেখে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালেন বাপিদা। থেকে গেল পৃথিবীটা নাকি, আমার প্রিয় ক্যাফে, তোমায় দিলাম, মানুষ চেনা দায়, তাকে তাড়াই যত দূরে, ভালোবাসি, ঘরে ফেরার গানের মতো বহু কালজয়ী গান। শ্রোতাদের কাছে, শ্রোতাদের হয়ে থেকে যাবে ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’। অবিনশ্বর, চিররঙিন, চিরস্থায়ী হয়ে। চলে গিয়েও চিরদিন ভক্তদের মাঝেই রয়ে যাবেন ‘মহীনের ঘোড়া’ বাপিদা।