যদি প্রশ্ন করা হয় ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বেশি আইকনিক রাইভালরির ম্যাচ কোনটি, তাহলে স্বভাবসুলভভাবেই উত্তর আসবে, ‘রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা’ অর্থাৎ এল ক্ল্যাসিকো।
প্রচণ্ড উত্তাপ, উত্তেজনা, এক্সাইটমেন্ট, টেম্পার এগুলোই এল ক্লাসিকোকে সংজ্ঞায়িত করে। এল ক্ল্যাসিকোর দিনে পুরো ফুটবল বিশ্বই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। লা লিগা ছাড়াও বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ফুটবল সমর্থকের নজর থাকে এই ম্যাচের ওপর। সিজন ঘুরে আবারো মুখোমুখি হবে এই দুই দল। আগামী ১৬ অক্টোবর রাত ৮টা ১৫ মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হবে এই সিজনের প্রথম এল ক্ল্যাসিকো।
এবারের এল ক্ল্যাসিকো অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। কারণ এবারের লড়াই পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ওঠার লড়াইও। এই ম্যাচের দু’দলেরই পয়েন্ট ২২। তবে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে বার্সেলোনা।
এল ক্ল্যাসিকো লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি খেলা ম্যাচ যেখানে দু‘দল প্রতিযোগিতায় ১৮৪ বার মুখোমুখি হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ পেয়েছে ৭৬টি জয় এবং বার্সেলোনা পেয়েছে ৭৩টি আর ৩৫টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি দল সমান সংখ্যক গোল করেছে (২৯৫)। তবে দু’দলের সর্বশেষ দেখায় জয় পেয়েছিলো বার্সেলোনা।
এবার এল ক্ল্যাসিকোর উত্তেজনার পারদে কিছুটা ভাটা পড়েছে বার্সার সাম্প্রতিক বাজে পারফরম্যান্সের কারণে। গত সপ্তাহে দু’দলই চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে ড্র করে। রিয়াল মাদ্রিদ ড্র করেছে শাখতার দোনেস্কের বিপক্ষে। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে সমতাসূচক গোলটি করেন রুডিগার। অন্যদিকে বার্সার হয়ে গোল করেন লেওয়ানডফস্কি। রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সার উভয়ের ড্র-ই শেষ মুহূর্তের নাটকীয় গোলে হলেও বার্সার ড্র বার্সা সমর্থকদের কাছে লজ্জার।
চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকতে হলে বার্সেলোনাকে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে জিততেই হতো। তবে ইন্টার মিলানের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করে বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ ভাগ্য ঝুলছে সুতার ওপর। বার্সার সামনে এখন ইউরোপা লিগে অবনমনের শঙ্কা। রিয়াল মাদ্রিদের অবশ্য সেরকম কোনো দুশ্চিন্তা নেই। চার ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ টেবিলের শীর্ষেই আছে কার্লো আনচেলত্তির দল।
আর বার্সার এই বাজে অবস্থার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যথেষ্টই সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছে বার্সেলোনা ক্লাব, কোচ এমনকি সমর্থকদেরও। তবে এতোকিছুর পরও এখন শুধুমাত্র এল ক্ল্যাসিকো নিয়েই ভাবতে চান বার্সা ম্যানেজার জাভি হার্নান্দেজ। ইন্টার মিলানের সাথে ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমাদের এল ক্লাসিকো নিয়ে ভাবতে হবে কারণ চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতোমধ্যে অনেক জটিল হয়ে গেছে। এটি লজ্জাজনক।’
তবে বাজে পারফরম্যান্সের সাথে ইঞ্জুরি সমস্যা আছে বার্সেলোনা শিবিরে। ইঞ্জুরির কারণে ম্যাচ মিস করবেন রোনাল্ড আজাউরো, তার বদলে দেখা যেতে পারে জুলস কৌন্ডেকে। সন্দেহ আছে হেক্টর বেলেরিন ও আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসনকে নিয়েও, তাই হয়তো খারাপ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও মাঠে দেখা যাবে জেরার্ড পিকে কে। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচ মিস করবেন মেম্ফিস ডিপাই-ও।
৪-৩-৩ ফর্মেশনে বার্সেলোনা একাদশ হতে পারে এরকম : টার স্টেগান (গোলকিপার), রবার্তো-গ্রাসিয়া-পিকে-আলানসো, ডি ইয়ং-পেদ্রি-কেসি, ডেম্বেলে-লেওয়ানডফস্কি- রাফিনহা। চোটের সমস্যা আছে মাদ্রিদ শিবিরেও। নার্ভের সমস্যার কারণে ম্যাচ মিস করতে পারেন রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া। তার বদলে মাঠে দেখা যেতে পারে আন্দ্রে লুনিনকে। আর মাদ্রিদের জন্য খুশির খবর হতে পারে রুডিগার ও ড্যানি সেবায়োসের ট্রেনিং করা। তবে রুডিগারের ম্যাচে ফেরার বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।
৪-৩-৩ ফর্মেশনে রিয়াল মাদ্রিদ একাদশ হতে পারে এরকম : আন্দ্রে লুনিন (গোলকিপার), কার্ভাহাল-মিলিটাও-আলাবা- মেন্ডি, চুয়ামিনি-ক্রুস-মদ্রিচ, ভালভার্দে-বেনজেমা-ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
বাজে পারফরম্যান্স হোক বা হোক ইঞ্জুরির সমস্যা, এল ক্ল্যাসিকো মানেই প্লেয়ারদের জন্য বাড়তি কিছু করার অনুপ্রেরণা। তাই কে কখন জ্বলে উঠবে আগে থেকে ধারণা করা যায় না কিছুই। বার্সেলোনা কী এই খারাপ সময়ের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিবে নাকি রিয়াল মাদ্রিদ বার্সেলোনাকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে যাবে এখন সেই উত্তেজনাতেই বুঁদ হয়ে থাক গোটা বিশ্ব।