সহসা মুক্তি পাচ্ছে না ছবি
অনন্য মামুনের ‘দরদ’, এম রাহিমের ‘জংলি’ ও সানী সানোয়ারের ‘এশা মার্ডার—কর্মফল’ ছবিগুলো নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের কমতি ছিল না।
সহসা মুক্তি পাচ্ছে না ছবি
অনন্য মামুনের ‘দরদ’, এম রাহিমের ‘জংলি’ ও সানী সানোয়ারের ‘এশা মার্ডার—কর্মফল’ ছবিগুলো নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের কমতি ছিল না।
মাঝখানে শোনা গিয়েছিল দুর্গাপূজায় ‘দরদ’ বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পাবে। তবে সেটাও সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন মামুন।
তবে কোটি কোটি টাকা লগ্নি করা ছবিগুলো মাসের পর মাস পড়ে থাকলে প্রযোজকের ক্ষতি বলেও মনে করেন মামুন। তিনি বলেন, ‘এই টাকাটা যদি অন্য ব্যবসায় লগ্নি করা হতো তাহলে এত দিনে অনেক লভ্যাংশ চলে আসত। আসলে সিনেমার ব্যবসাটা ভাগ্যের ওপর। কে জানত হঠাৎ আন্দোলন তৈরি হবে, সরকার পতন হয়ে নতুন সরকার গঠন হবে। তবে আমি আশাহত নই। বিশ্বাস আছে, ভালো কিছু হবে।’
‘এশা মার্ডার—কর্মফল’ ছবিটির টিজার প্রকাশ পেয়েছে রোজার ঈদের আগেই। কথা ছিল, ঈদে ছবিটি মুক্তি পাবে। সেটা হয়নি দুই দিনের শুটিং বাকি থাকার কারণে। এখনো ছবিটি ঝুলে আছে একই কারণে। গতকাল নির্মাতা সানী সানোয়ার বলেন, ‘আগস্টেই আমরা শুটিংয়ের পরিকল্পনা করেছিলাম। সেটা তো আর হলো না। এখন আবার নতুন করে অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে শিডিউল নিয়ে বসতে হবে। দুই দিনের শুটিং হলেও ১৪ জন শিল্পীকে লাগবে আমার। একসঙ্গে এতজনের শিডিউল মেলানোটা কিন্তু বেশ কঠিন। শুধু তা-ই নয়, আমি যদি আগামী মাসে শুটিং শেষও করতে পারি তার পরও দুই মাস লাগবে পোস্ট প্রডাকশনে। সব মিলিয়ে এই বছর ছবিটা মুক্তি দিতে পারব না। আগামী বছরের শুরুর দিকে কিংবা কোনো উৎসবে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’
‘জংলি’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল কোরবানির ঈদে। তবে শুটিং শেষ না হওয়ায় তখন নির্মাতা মুক্তি দিতে পারেননি। মাঝখানে শোনা গিয়েছিল, অক্টোবরে ছবিটি মুক্তি পাবে। তবে সেটাও নিশ্চিত নয় বলে জানান পরিচালক এম রাহিম। তিনি বলেন, ‘আমরা তড়িঘড়ি করে ছবিটি মুক্তি দিতে চাই না। একটু সময় নিতে চাই। আমাদের টিমের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব ছবিটি মুক্তির বিষয়ে। সিদ্ধান্ত হলে জানাব।’
হল মালিকরা বিপাকে
কোরবানির ঈদের পর মাত্র একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে হলে। ‘অমানুষ হলো মানুষ’ নামের ছবিটি দর্শক সাড়াও পায়নি। হল মালিকরা ছবিটি চালাতে গিয়ে উল্টো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এরই মধ্যে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হল মধুমিতা সংস্কার করেছেন কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। ভারত থেকে কারিগর এনে সাউন্ড সিস্টেম ও পর্দা উন্নত করেছেন। লাখ লাখ টাকা করেছেন লগ্নি। অথচ কোনো কনটেন্ট না থাকায় হল চালু করতে পারছেন না নওশাদ। গতকাল তিনি বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে সত্যিই হল চালানো আর সম্ভব হবে না। ছবির অভাবে বছরের বেশির ভাগ সময়ই হল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এটা শুধু এই বছর তা নয়, পাঁচ বছর ধরেই এমন চলছে। ছবি নির্মাণ শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। ভেবেছিলাম ‘দরদ’, ‘এশা মার্ডার—কর্মফল’ বা ‘জংলি’ মুক্তি পেলে কিছুটা দর্শক পাব। সেটাও এখন হচ্ছে বলে জানলাম। আমরা যাঁরা চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত, বিশেষ করে হল মালিক তাঁরা গত একটা দশক শুধু ক্ষতির সম্মুখীনই হচ্ছি। দেখি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে কিছু দাবি নিয়ে যাব। এর মধ্যে যোগাযোগও করেছি। হয়তো কিছু দিনের মধ্যে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে।’
শুটিংয়ের খবর নেই
সরকার পতনের পরপরই একাধিক ছবির ঘোষণা দিয়েছিলেন নির্মাতারা। ‘আয়নাঘর’, ‘ভয়ংকর আয়নাঘর’, ‘হারুনের ভাতের হোটেল’—এমন ছবিগুলোরও নেই কোনো আপডেট। ‘আয়নাঘর’ নির্মাতা জয় সরকার বলেন, ‘আমি এখনো প্রযোজক পাইনি। কিভাবে শুরু করব। এ ধরনের ছবি নির্মাণ করতে গেলে অনেক টাকার দরকার। ভালো প্রযোজক না পেলে ছবিটি শুরু করব না।’
এফডিসির চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক থেকে শুরু করে সব কলাকুশলী এখন বেকার। কথাটা স্বীকার করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, ‘এখন ছবিতে লগ্নিকারক পাওয়া মুশকিল। বিগত সরকার পতন হওয়ার পর অনেক প্রযোজক আড়ালে চলে গেছেন। তবে আশা করছি, খুব শিগগির সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ এই অবস্থা চলতে থাকলে চলচ্চিত্র পেশায় কাউকে পাওয়া যাবে না।’