সোমবার, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩২ বার পঠিত

আবহাওয়া অধিদফতর নতুন করে তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা বা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি করে বলেছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপ প্রবাহ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

দেশে চলতি মৌসুমে গত কয়েকদিন ধরে টানা তীব্র গরমের মধ্যে আজ চতুর্থ দফায় হিট অ্যালার্ট জারি করা হলো।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এখন প্রায় ৪৫টির মতো জেলার ওপর দিয়ে এই দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন মাত্রায়।

সংস্থাটি বলছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে তীব্র ধরণের তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ সময় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়বে।

আগামী তিন দিনে তাপমাত্রা আর খুব একটা বাড়বে না, যদিও গরমও খুব একটা কমবে না। তবে এবারের তাপপ্রবাহের পর একটু একটু করে বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে আশা করছে আবহাওয়া বিভাগ।

বাংলাদেশে সাধারণত কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেখানে সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে, সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে থাকেন আবহাওয়াবিদরা।

এছাড়া তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে, সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।

আর তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ওঠে যায়, তখন তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

বাংলাদেশে এবার যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনাসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলার ওপর দিয়ে গত কিছুদিন ধরে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সবচেয়ে বেশী তাপমাত্রায় রেকর্ড হয়েছে মোংলায়, ৪১ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাংলাদেশে এর আগে ২০২৩ সালকে বাংলাদেশের উষ্ণতম বছর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। ওই বছর একটানা তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড হয়েছিলো।

ফলে এ নিয়ে পরপর দুই বছর প্রায় একই ধরণের দাবদাহের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

বৃষ্টি হবে, তবে কবে হবে?
নতুন করে তিন দিনের হিল অ্যালার্ট জারি হলেও আবহাওয়া বিভাগ আশা করছে চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।

‘২৯ তারিখের দিক থেকেই সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।

গরমে করণীয়
যদিও চলতি সপ্তাহের শেষ থেকে বৃষ্টি হলেও তাতে তাপমাত্রা কতটা কমে তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ সাধারণত পূর্বাঞ্চল থেকে বৃষ্টি শুরু হলে তা খুব একটা গরম কমায় না।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছেন, বৃষ্টিপাত পশ্চিমাঞ্চল থেকে শুরু হলে সেটি দ্রুত আবহাওয়া ঠাণ্ডা করতে শুরু করে কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল দিয়ে।

‘ফলে দ্রুতই গরম খুব একটা কমবে না। তবে তাপমাত্রা আর বাড়বেনা এটি বলা যায়,’ বলছিলেন তিনি।

আজ থেকে পরের তিন দিন কেমন যাবে
আবহাওয়া বিভাগ বলছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

একই সাথে কোন কোন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে।

আজ খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলা এবং বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে।

সতর্কতা
হিট অ্যালার্টের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ শুক্রবার এবং তৃতীয় দিনে শনিবারও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি, ঝড়ো বৃষ্টি কিংবা শিলা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে আজ থেকে প্রথম দুই দিনে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রাও অপরিবর্তিত থাকার সম্ভাবনা থাকলেও তৃতীয় দিনে গিয়ে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।

তিন দিনেই জলীয় বাষ্পের কারণে অস্বস্তিভাব থেকেই যাবে অর্থাৎ গরম খুব একটা কমবে না।

তবে এ তিনদিনের তাপপ্রবাহের পরেই দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে যা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

এবার এত তাপমাত্রার কারণ কী
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে।

এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, বাংলাদেশের ওই অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান।

এইসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝে ওঠানামা করে।

‘যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়,’ বিবিসি বাংলাকে সম্প্রতি বলেছেন আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এ বছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

‘বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি,’ বলছিলেন আবুল কালাম মল্লিক।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com