গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাদকাসক্ত ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীসহ পরিবারের লোকজন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে খুন করলেন বাবা। পরে বাবা নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
বুধবার সকাল ৮টার দিকে উপজেলার জামালপুর পূর্বপাড়া আব্দুর রশীদ বাগমারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত প্রবাস ফেরত মাদকাসক্ত কাউসার বাগমার (২৪) আব্দুর রশিদ বাগমারের ছেলে।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাদকাসক্ত কাউছার নেশার টাকার জন্য প্রতিনিয়তই তার মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া ও মারধর করতেন। এ নিয়ে এলাকার স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানসহ একাধিক সালিশ-দরবার করেও ছেলেকে মানুষ করতে পারেনি তার পরিবারের লোকজন। অবশেষে কুঠার দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত ছেলেকে হত্যা করে পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করেন বাবা।
বাবা তোমারে ছাড়া জেলের মধ্যে আমি
কেমনে থাকমু একলা একলা?
কোলেপিঠে আদর যত্নে তিল তিল করে গড়ে তোলা ২৫ বছর বয়সের বুকের ধন ছেলে কাউসারকে বাবা হয়ে নিজ হাতে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করবেন এমন চিন্তা কখনো করেননি বাবা রশিদ। বাস্তবে এমন ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার জামালপুর গ্রামে।
লেখাপড়া শেষে দেশে কোন চাকরি না পেয়ে সৌদি পাড়ি জমায় কাউসার । চাকরির মেয়াদ শেষে বছর খানেক আগে দেশে ফিরে আসে কাউসার। দেশে এসে শুরু হয় বেকার জীবন । এক পর্যায়ে মাদকসেবীদের পাল্লায় পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।
মাদকের টাকার জন্য বাবার সাথে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি করতো সে।
মাদকের টাকার জন্য বাড়িতে ভাঙচুর ও বাবা-মাকে অত্যাচার ও নির্যাতন করতো। বাবার নামে থাকা দুই কাঠা জমি বিক্রি করে নেশার জন্য টাকা দিতে বলে কাউসার । কাউসার সারা রাত নেশার ঘোরে বাড়ির বাইরে থাকতো, কোন ভাবেই মাদক থেকে ফেরানো যাচ্ছিল না তাকে। জমি বিক্রি করে নেশার টাকা না দিলে বাবা মাকে হত্যার_হুমকি দেয়।
বাবা রশিদ সারারাত কান্না করেন ছেলের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে। ভোররাতে হঠাৎই বাড়িতে থাকা কুড়াল নিয়ে রুমে ঢুকে কোপাতে শুরু করেন একমাত্র আদরের ধন কাউসারকে। বাবার এমন কোপানীতে ছেলে বলতে থাকে বাবা তুমি আমারে আর মাইরো না, আর কোপ দিওনা, আমি আর নেশার টাকা চাইমু না তোমগো কাছে!
আর্তনাদে ছেলের দেহে বাবার কুড়াল কোপানী থেমে যায় মুহূর্তে। রক্তাক্ত ছেলেকে আপন করে কোলে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না করতে থাকেন বাবা নামের মানুষটি। বলতে থাকেন বাবা তুই আমার আদরের ধন, কলিজার মানিক, ততক্ষণে ছেলের নিথর দেহটি বাবার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে চিরদিনের জন্য। আশপাশ থেকে ছুটে আসা মানুষজন ছেলে হত্যাকারী বাবাকে বলতে থাকেন, আপনি পালিয়ে যান, পুলিশ আসবে আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে, আপনার ফাঁসি হবে, কারোর কথাই শুনছেনা বাবা, তিনি বললেন, আমার বাবাডারে আমি অনেক ভালবাসি, আমার বাবাডারে ছাইড়া আমি কই যামু, আমার আর বাইচা থাইকা লাভ নাই! ছেলের লাশের কাছে বসে বাবার এমন কান্নায় আশপাশের মানুষজনের চোখের পানি চলে আসে।
সকালে পুলিশ হাজির,, ছেলের মৃত্যুশোকে বাবা হাউমাউ করে বলতে লাগলেন নেশার টাকা দিতে না পারায় আমি আমার পোলারে মাইরা ফালাইছি আমারে জেল দেন ফাঁসি দেন, আমারে থানায় লইয়া যান! ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা কুড়ালটি জব্দ করে পুলিশ। স্বইচ্ছায় পুলিশের সাথে রওনা দেওয়ার সময় বাবা, ছেলের শরীর জড়িয়ে ধরে আবারও হাউমাউ করে কান্না করতে করতে বলতে লাগলেন, বাবা তোমারে আমি মারতে চাই নাই ! তোমারে আমি কথা দিয়া গেলাম, আদালতে গিয়া আমি কমু আমার বাবাডার হত্যাকান্ডের বিনিময়ে হলেও যেন দেশে নেশা বন্ধ করে সরকার! বাবা আমার খুব কষ্ট লাগতাছে, বাবা আমার বুকটা ছিড়া যাইতাছে তোমার লেইগা, তোমারে কই পামু আমি বাবা, তোমারে ছাড়া আমি জেলের মধ্যে কেমনে থাকমু একলা একলা?
সন্তান যতই খারাপ হউক বাবা মা কি সন্তানের মায়া ত্যাগ করতে পারে। এমন করুন পরিনতি কোন বাবা সন্তানের জিবনে আর না আসুক। আল্লাহ্ আপনি সহায় হউন।