বৃহস্পতিবার, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ঠা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা নেই : তীব্র শীত

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৭৬ বার পঠিত

প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে দেশ। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে সূর্য। ফলে সারা দেশেই শুরু হয়েছে তীব্র ঠাণ্ডা। শৈত্যপ্রবাহ (১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা) না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত অবস্থা সারা দেশে। সকালের দিকে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ার দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকায় কোথাও কোথাও দৃষ্টিসীমা ১০ গজে নেমে এসেছে। ফলে সব ধরনের যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

গত কয়েক দিন থেকে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে সূর্যের আলো মাটিতে পড়তে পারছে না কুয়াশার কারণে। সূর্য থেকে আসা তাপমাত্রার পুরোটাই শোষণ করে নিচ্ছে ঘন কুয়াশা। ফলে উচ্চ তাপমাত্রা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে বাড়তে পারছে না। চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের সর্বত্রই উচ্চ তাপমাত্রার সাথে নি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান খুব কম। পর্যাপ্ত সূর্যতাপ পাওয়া যাচ্ছে না বলে সারা দেশেই বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নি¤œ তাপমাত্রার ব্যবধান রাজধানী ঢাকাতেই সবচেয়ে কম। ফলে গতকাল ঢাকাবাসী এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র শীতের কবলে ছিল। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনি¤œ ছিল ১৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উচ্চ ও নি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র ২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুধু রাজধানীতেই নয়, ঢাকা বিভাগের সব অঞ্চলে গতকাল উচ্চ ও নি¤œ তাপমাত্রার মধ্যে ব্যবধান খুব কমই ছিল।

কুয়াশা নিয়ে গতকাল বুধবার কানাডা থেকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের বেশ কিছু স্থানে সবচেয়ে বেশি মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে। কুয়াশার কারণে সূর্য ঢাকা থাকবে বলে এসব অঞ্চলে প্রচণ্ড শীত পড়বে এবং একই সাথে ঠাণ্ডা বাতাসও প্রবাহিত হবে।

বেশি ও ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হওয়ার কারণ হিসেবে মোস্তফা কামাল বলেন, সূর্য অস্ত যাওয়ার পর বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে গেলে বাতাসে অবস্থিত জলীয় বাষ্প আগে থেকে বিরাজমান ধুলিকণা ও বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অন্যান্য বস্তুকণা ঘনীভূত হয়ে কুয়াশার সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া দেশের বাইরে থেকে ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে ঘন কুয়াশা আসাও অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। ঠাণ্ডা বাতাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। একই কারণে গতকাল রাত থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় কুয়াশা ঘন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মোস্তফা কামাল দেশব্যাপী চলমান তীব্র শীত সম্বন্ধে বলেন, শীতের ঠাণ্ডা ও কুয়াশার প্রকোপে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আরো দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে কুয়াশা ও শীতের প্রকোপ কমার জন্য। তবে গত দুই দিনে যে তাপমাত্রার ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়ে আসছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তা থেকে আরো বেশি ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হবে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার পর থেকে শুরু করে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে বলে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণ করে তিনি জানান।

ঘন কুয়াশার কারণে হাইওয়েতে বিপরীত দিক থেকে আসা তীব্র গতির গাড়ি দেখতে না পাওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে। অন্য দিকে কুয়াশার কারণে নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী কার্গো চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত নদীতে ১০ গজের দূরের বস্তু দেখা যায় না বলে চলাচল বন্ধ রাখতে হয় অথবা তীব্র আলো জ্বালিয়ে চলাচল করে। কিছুক্ষণ পরপর বাঁশি বাজিয়ে চলতে হয় বলে তীব্র শব্দদূষণের কারণ হচ্ছে। অন্য দিকে সড়ক পথে যানবাহনকেও কিছুক্ষণ পরপর তীব্র শব্দে বাঁশি বাজিয়ে চলাচল করতে হয় সাথে হেডবাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে হয় সারাক্ষণ। দূর পাল্লার বাসগুলো চলাচলে দেরি হচ্ছে বেশ কয়েক দিন ধরে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না বলে অফিসগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।

গতকাল বুধবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ছিল টেকনাফে ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশের অন্যান্য নি¤œ তাপমাত্রার অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। যেমন গতকাল তেঁতুলিয়ায় নি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজারহাটে ছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ছিল ১০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বদলগাছীতে ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চয়াডাঙ্গায় ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশায় ঢাকার ফ্লাইট গিয়ে নামে ভারতের হায়দরাবাদে : ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল বুধবার সাতটি ফ্লাইট ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেরিতে উড্ডয়ন করেছে এবং একটি ফ্লাইট যথাসময়ে অবতরণ করতে পারেনি। ঢাকা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, রিয়াদ থেকে আসা সৌদি এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকায় অবতরণ করার কথা ছিল। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সেটি ওই সময় নামতে পারেনি। ফ্লাইটটি ভারতের হায়দরাবাদে গিয়ে নেমেছে। পরে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে ফ্লাইটটি ঢাকায় ফিরে এসেছে। অন্য দিকে কুয়াশার কারণে সাতটি ফ্লাইট উড্ডয়নে বিলম্ব হলেও কোনো ফ্লাইট বাতিল হয়নি।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সকালে জাজিরা এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, এয়ার অ্যারাবিয়া, ফ্লাই দুবাই, কাতার এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নির্ধারিত সময়ে উড়তে পারেনি। ফ্লাইটগুলো এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে।

মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে
বাসস জানায়, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কবর বলা হয়।

গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে কোথাও কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। বুধবার সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ২৬ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। গতকাল ঢাকায় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশা আর শীতের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার খেটেখাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে এ অঞ্চল কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ার পর তীব্র শীতে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, রাজমিস্ত্রিসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সীমান্তবর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন বাজার মোড়, সড়ক এলাকার রোডঘাটগুলোতে ধীরগতিতে যান চলাচল করতে দেখা গেছে। দিনের বেলাতেও অনেকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে। গত তিন দিন শীতের দাপটে জনজীবনে দুর্ভোগের পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ার অবস্থা এখানকার খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর।

কুয়াশাচ্ছন্ন চুয়াডাঙ্গায় দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা আর উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়ায় এ জেলার জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত সোমবার রাত থেকে থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা। ঘন কুয়াশায় গতকাল বুধবার সারাদিন এ জেলার মানুষ সূর্যের দেখা পায়নি। গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে সংখ্যায় তাপমাত্রা উপরের দিকে থাকলেও হিমেল হাওয়া আর বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় প্রচুর শীত ও ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের কাছাকাছি অবস্থিত হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতি বছর এখানে শীতের প্রকোপ বেশি হয়ে থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত কয়েক সপ্তাহ থেকে জেলায় শুরু হয়েছে প্রচণ্ড কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া। দুপুরে সূর্যের কিছুটা দেখা মিললেও তাপমাত্রা বাড়েনি। বিকেল থেকেই শুরু হয় হিমেল হাওয়া ও কুয়াশা পড়া। রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে পড়তে থাকে তুষারের মতো কুয়াশা। এ দিকে শীত জেঁকে বসায় ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে শিশু ও বয়স্ক রোগীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদফতর না থাকায় জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের তীব্রতা একটু বেশি অনুভূত হচ্ছে। শীতের বর্তমান অবস্থা আরো কয়েক দিন বিরাজ করতে পারে। এ মাসের শেষে কয়েকটি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলে কয়েক দিনের তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। সাধারণ খেটেখাওয়া, ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এ ছাড়া ঘন কুয়াশায় বোরো আবাদ বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি বীজতলায় কোল্ড ইনজুরির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, গত কয়েক দিন ধরে টাঙ্গাইলে উত্তরের বাতাস বইছে। আরো চার-পাঁচ দিন এই বাতাস থাকতে পারে। বুধবার টাঙ্গাইলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সরেজমিন দেখা গেছে, শীতের তীব্রতায় অনেকেই খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। ছিন্নমূল মানুষগুলো স্কুল-কলেজ ও মসজিদের বারান্দায় অতিকষ্টে রাত যাপন করছেন। অনেকে খড় ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: আহসানুল বাসার জানান, বর্তমানে টাঙ্গাইলে যে তাপমাত্রা আছে, এতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং সরিষা ও গমের উপকার হবে। কয়েক দিন রোদ উঠলে সবজির জন্যও উপকার হবে। তবে টানা ১০ দিন এই অবস্থা থাকলে বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরিতে’ পড়তে পারে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, জেলার প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৬০ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার কম্বলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নাগেশ^রী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের নাগেশ^রীতে পৌষের হাড়কাঁপানো শীতে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে মানুষ। বাড়ছে শীতবস্ত্রের চাহিদা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখখারুল ইসলাম জানান, এ উপজেলায় শীতবস্ত্রের চাহিদা প্রায় ৫০ হাজার। এরই মধ্যে পেয়েছি সাড়ে সাত হাজার কম্বল। আরো ১৫ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান ৮০০ কম্বল বিতরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগর জানান, তিনিও ব্যাক্তিগতভাবে ৫০০ কম্বল বিতরণ করেছেন।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, দেশের উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে জেঁকে বসেছে শীত। শীত নিবারণে পৌর শহরে রাস্তার পাশের ভাসমান দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের গড়িয়াবুনিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ বলেন, ঠাণ্ডায় হাত অবশ হয়ে যাচ্ছে। গতকাল শ্রমিকরা মাঠে পাকা ধান কাটতে গিয়ে কাজ করেছেন মাত্র ২-৩ ঘণ্টা।

শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের শিবচরে ছিন্নমূল ও চরাঞ্চলের খেটেখাওয়া মানুষ ও গবাদিপশু নিয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। অন্য দিকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। তাই মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে দূরপাল্লার যানবাহন ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে ৯ হাজারেরও বেশি শীতবস্ত্রের বরাদ্দ রয়েছে এ উপজেলায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com