বরিশালের গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ছাত্রলীগ-বিএনপির যৌথ হামলার শিকার হয়েছেন মোঃ মেহেদী হাসান মাতুব্বর নামের এক ছাত্রদল নেতা ও তার সহোদর। গুরুতর আহত ওই ছাত্রদল নেতাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপি নেতার আতœীয় ছাত্রলীগ নেতাকে রক্ষায় এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের। ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে স্থানীয় বিএনপি’র জহির উদ্দিন স্বপন গ্রুপ ও আকন কুদ্দুস গ্রুপ রয়েছে মুখোমুখী অবস্থানে। যে কোন সময় তাদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলাসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ জানাতে গৌরনদী উপজেলার ১নং খাঞ্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ নুর আলম সেরনিয়াবাতের ভাতিজা ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা প্রতীক সেরনিয়াবাত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে উপজেলার বাকাই নিরঞ্জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। খবর পেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম. জহির উদ্দিন সমর্থক ছাত্রদল নেতা, ওই ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রভাবশালী সদস্য মোঃ মেহেদী হাসান মাতুব্বর সেখানে গিয়ে তাদেরকে মিছিল করতে বাঁধা দেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে বাক-বিতন্ডা চলে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ছাত্রলীগ নেতা প্রতীক সেরনিয়াবাতের চাচা শশুর স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ কামাল হাওলাদার ও তার সহযোগী তারিকুল ফকির, রিয়াজুল চৌকিদার। তারা এসে ভাতিজি জামাতা ছাত্রলীগ নেতা প্রতীক সেরনিয়াবাতের পক্ষ নিয়ে ছাত্রদল কর্মী মোঃ মেহেদী হাসান মাতুব্বরের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে পিটিয়ে আহত করে। হামলায় মেহেদী হাসানের ডান হাত ভেঙ্গে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে যখম হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে তার ছোট ভাই স্কুল ছাত্র আফ্রিদি মাতুব্বর। হামলাকারীরা তাকেও পিটিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মাতুব্বরের বাবা মোঃ আজাদ মাতুব্বর বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গৌরনদী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন।
আহত ছাত্রদল নেতা মোঃ মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আক্কেল আলী সরদার ওই এলাকার নব্য গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি তারিকুল ফকির ও রিয়াজুল চৌকিদার নামে দু’জন দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করেন। তারা সব সময় কোমড়ে চাইনিজ কুড়াল নিয়ে ঘুরে বেড়ান। আমার ওপরে হামলার নেপথ্যে আক্কেল আলী সরদারের ইশারা রয়েছে। আমরা বিএনপির চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ এম. জহির উদ্দিন স্বপনের অনুসারী। ফলে আকন কুদ্দুসুর রহমানের অনুসারীরা আমাদের পায়ে পারা দিয়ে সংঘর্ষ বাঁধাতে চাইছে।
আহত ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মাতুব্বরের অভিযোগকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে আক্কেল আলী সরদার বলেন, আমার কোন বডিগার্ড নেই। মেহেদীকে মেরেছে কামাল। তাকে জিজ্ঞাসা করেন। ৫আগষ্টের পর থেকে আমি এলাকায় অনেক অন্যায় ঠেকিয়েছি। দলে আমার কোন পদ নেই। আমি একজন বিএনপি কর্মী।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা কামাল হাওলাদার বলেন, মেহেদীর অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা। তার ছেটেভাই আফ্রিদি প্রতীকের স্ত্রী ও আমার ভাতিজিকে উত্যাক্ত করে। প্রতীক এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় মেহেদী ও আফ্রিদি দুই ভাই মিলে প্রতীককে মারধর করে। আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রতীক মেহেদীকে একটি থাপ্পর দেয়। এর বেশী কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আমি ১৭ বছর এলাকায় আসতে পারিনি। এ সময়ে আমি নারায়নগঞ্জ জেলার সিদ্দিরগঞ্জ উপজেলার ৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ৫ আগষ্টের পর এলাকায় ফিরে ইউনিয়ন বিএনপির সাথে কাজ করছি। এখানে বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নেই। ওরা সুবিধা নেয়ার জন্য গ্রুপিং এবং বিরোধের কথা বলছে। খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির কোন কমিটি নেই দাবি করে তিনি বলেন, কমিটি হলে আমি গুরুত্বপূর্ন কোন দায়িত্ব পাবো।
বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টার কথা অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা প্রতীক সেরনিয়াবাত বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। এটা অস্বীকার করবোনা। অতিতে ছাত্রলীগ করলেও এখন আমি রাজনীতি ও সংগঠনের সাথে যুক্ত নেই। আমার স্ত্রীকে উত্যাক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি ওদের হাতে মার খেয়েছি। পরে আমার স্বজনরা আমাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।
বিএনপি নেতা কামাল হাওলাদারের অভিযোগের জবাবে আহত ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান মাতুব্বর বলেন, ভাতিজি জামাতা ছাত্রলীগ নেতার পক্ষ হয়ে নিজ দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতার ওপর হামলা চালানোর অপরাধে তিনি দলীয় শাস্তির মুখোমুখী হবেন। এ থেকে নিজেকে রক্ষায় এখন সে আমার ভাইয়ের নামে তার বিবাহিত ভাতিজিকে উত্যাক্ত মনগড়া অভিযোগ করছে।
থানায় অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ইউনুস মিয়া বলেন, বাদির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তি আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।