বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানই জাতির প্রত্যাশা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে নগরীর দক্ষিণ সুরমা কুশিয়ারা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিভেদ নয় ঐক্য হোক আমাদের সবার শ্লোগান। জাতি ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছে, কিন্তু এর স্থায়ী সুফল ভোগ করতে হলে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার বিপ্লবের মূল শক্তি ছিল জাতীয় ঐক্য।
রাষ্ট্র সংস্কারে জামায়াত ৪১ দফার আলোকপাত করে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের ফিরিস্তি তুলে ধরে বলেন, আমরা জুলুমের স্বীকার হয়েছি কিন্তু কারো ওপর জুলুম হোক এটা চাই না। কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাক আমরা সেটা চাইনা, জাতিও সেটা চায় না। ক্যাঙ্গারু কোর্টের প্রহসনের বিচারে আমাদের ১১ জন জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে শহীদ করা হয়েছে। কিন্তু তারা পালানোর ন্যুনতম চেষ্টা করেননি। শহীদ মীর কাশেম আলীকে অনেকেই দেশে আসতে মানা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি যদি না আসি তাহলে ওরা মনে করবে আমি কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধী। তাই হাসিমুখে ফাঁসির রশি গলা দিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা উত্তরের আমির হাফিজ আনওয়ার হোসাইন খান ও জেলা দক্ষিণের আমির অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান।
সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও আলেম-উলামা, সাংবাদিক, আইনজীবী, পেশাজীবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হযরত ওমরের শাসনকালের চিত্র তুলে ধরে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, হযরত ওমরকে যেমনিভাবে একটি লম্বা পোষাকের জন্য জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। জামায়াত জনগণের সেবার সুযোগ পেলে আপনারাও এমন সুযোগের নিশ্চয়তা পাবেন। ‘আয়নাঘর’ প্রসঙ্গ টেনে তিনিস বলেন, আয়না ঘর আরো কিছু দিন থাকুক, যারা এর সৃষ্টি করেছে তাদেরকে সেখানে কিছুদিন রাখার ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে তারা বুঝতে পারবে তারা কি বানিয়েছিল। জামায়াতের রাজনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জামায়াতের কোনো কাজে, কোনো বক্তব্যে ত্রুটি বিচ্যুতি দেখা দিলে অবলীলায় তা অবহিত করবার জন্য উপস্থিত সূধীমহলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ক্বারী হেলাল আহমদের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস-ঊন-নূর, জামায়াতের সিলেট অঞ্চল টিম সদস্য হাফিজ আব্দুল হাই হারুন, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শাকুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমতুল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিলেট মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান, খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলম, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নুরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি শরীফ মাহমুদ প্রমুখ।
সমাবেশে সম্মিলিত কণ্ঠে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন সিলেট সাংস্কৃতিক সংসদের শিল্পীবৃন্দ।