বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সব জানি কারা গুম করিয়েছেন, কারা গুমের নির্দেশ দিয়েছেন, কারা গুম সংঘটিত করেছেন, এগুলো আমরা জানি। তাই অস্বীকার করে কোনো লাভ হবে না, সত্যকে স্বীকার করুন এবং এই সদস্যগুলোকে বের করে নিয়ে আসুন। তাদের (গুম হওয়া ব্যক্তিদের) বাচ্চাগুলো শিশু সন্তানরা গতকাল কিভাবে আহাজারি করেছে। বুক ফেটে যায়; আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এখন সময়ের দাবি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, যাদের সন্তান চলে গেছে, যাদের পিতা চলে গেছে, যাদের ভাই চলে গেছে এভাবে। এটা নতুন নয় কিন্তু, ৭২-৭৫ সালেও হত্যা হয়েছে। তখন আমরা দেখেছি রক্ষী বাহিনী তৈরি করে আপনারা কী করেছেন। আমরা সেই অতীত টানতে চাই না। আপনারা দয়া করে বাংলাদেশের মানুষের তাদের প্রাপ্যটা ফিরিয়ে দেন। একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমরা এখানে চাই, যে কথা বারবার করে বলা হচ্ছে। যদি না দিতে পারেন জনগণ সেটা ভালো করে আদায় করে নিতে জানে এবং সেভাবে রাস্তায় নেমেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পাকিস্তান থেকে আমরা কেন বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম এটা সকলেই জানেন। আমাদের যেই অধিকার সেটা তারা দেয়নি এবং আমাদেরকে পাকিস্তানি হিসেবে তারা মেনে নেয়নি। বড় সমস্যাটা ছিল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে ছিল না। কী কারণে আমরা সেদিন যুদ্ধ করেছিলাম? সেই সময় যে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম আজকের এই বাংলাদেশ দেখার জন্য কিন্তু যুদ্ধ করিনি। আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা- এটা ছিল আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আজকে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরে আমরা দেখছি আমাদের সমস্ত আশা আকাঙ্ক্ষা সব ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আজকে আমাদের বলতে হচ্ছে আমরা এই দেশ চাইনি।
তিনি বলেন, আপনারা গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছেন, যাকে আমরা নির্বাচিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলি। আমরা কল্পনাও করতে পারি না বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বে থাকা একজন প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ অশালীন রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা বলতে পারেন। এটা মাঝেমধ্যে মনে হয়- হয়তো আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে না হয় তার মধ্যে কোনো সমস্যা আছে। কারণ এ ধরনের কথা শুনতে আমরা অভ্যস্ত নই।
ফখরুল বলেন, গুম হওয়ার বিষয়ে যে নাটকটা করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে এরা কেউ গুম হয় নাই। আজকে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, তাদের দফতর থেকে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে এগুলো স্বীকার করে নেন এবং কী করে এগুলো শোধরানো যায় তার ব্যবস্থা করুন। এই মানুষগুলো কোথায় আছে কিভাবে আছে; আপনারা বলছেন সরকার তাদেরকে নেয়নি, তাহলে কোথায়? এই দায়িত্ব তো আপনার (সরকার)।
গতকাল গুমের শিকার এক ব্যক্তি ফিরে এসেছেন কিন্তু তিনি কথা বলছেন না ভয়ে। এরকম অনেক মানুষ আছে যারা বেরিয়ে এসেছে কিন্তু কথা বলছে না। আজকে মিথ্যাচার করছে সরকার এবং সরকারের মন্ত্রীরা। মানবাধিকার কমিশনের হাই কমিশনার তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রীদের কাছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মিডিয়ার কাছে। প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। গুমের বিষয় আছে এবং সেটার অবাধ সুষ্ঠু স্বাধীনভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া এ দেশকে গণতন্ত্র দিয়েছেন। খালেদা জিয়া প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। খালেদা জিয়া এদেশের নারী আন্দোলনের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন। আজকে ন্যূনতম শিষ্টাচার সেটুকু আপনি তার প্রতি করছেন না।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা সবাইকে বন্ধু হিসেবে পেতে চাই। এই গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আমরা সবাইকে আমাদের সহযোদ্ধা হিসেবে পেতে চাই- সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা অতীতেও কাজ করেছি, সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি, জেলে গিয়েছি, গুম হয়েছি, খুন হয়েছে আমাদের ভাইয়েরা, আমাদের সন্তানেরা। কিন্তু আমরা সেই পথ থেকে কখনো সরে আসেনি। আমরা বিশ্বাস করি- আমাদের সাথে যারা যুদ্ধ করবেন, যারা এই লড়াইয়ে থাকবেন, গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে থাকবেন, তারা কখনো পথ থেকে সরে যাবেন না। বিশ্বাস আমাদের আছে। আমরা সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে লড়াই করছি, যেন অবশ্যই জয়ী হই।
ফখরুল বলেন, আশা করি আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধর, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, নতুন করে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নির্মাণ করবে। নতুন করে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে, নতুন করে এখানে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করবে এবং জয়ী হবে- এই বিশ্বাস আমাদের আছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরীন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ।