স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুরঃ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ায় পুরো গাজীপুর সিটি জুড়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ, নানা আলোচনা ও চুলচেরা বিশ্লেষণ। জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি কি জয়ী হতে পারবেন? এমন প্রশ্নে সাধারণ ভোটারদের সাফ জবাব, জাহাঙ্গীর আলম পাশ করবেন বলেই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আমরা তাকেই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবো। অপরদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. মোঃ আজমত উল্লাহ খানের কর্মী সমর্থকরা বলছেন, ২৫ মে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী এড. মোঃ আজমত উল্লাহ খানকে জয়ী করে গাজীপুর সিটির মেয়র হিসাবে উপহার দেবো। এমন নানা আশা-ভরসার দোলাচালে প্রতিটি মুহুর্ত পার করছেন এখানকার ভোটাররা।
আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। এরই মধ্যে মেয়র পদে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করলেও শেষদিন (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত ১২ জন প্রাথর্ী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এড. মোঃ আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন- বাংলাদেশ প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান, গণফ্রন্ট এর প্রার্থী আতিকুল ইসলাম, জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহম্মেদ সহ স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, বিএনপি নেতা হাসান উদ্দিন সরকারের ভাতিজা এবং আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত কারারুদ্ধ নূরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম, আবুল হোসেন ও মো. হারুন অর রশীদ। এছাড়াও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুনও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দেন।
মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নিতে গাজীপুর সিটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নৌকা প্রতীকের জন্য আবেদন করেছিলেন ১৭ জন মেয়র পদের প্রার্থী। লবিং তদবিরে মোটামুটি সবাই আশায় ছিলেন তারা নিজেরাই নৌকা প্রতীক পাবেন। তবে মানুষজনের জল্পনা কল্পনায় ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. মোঃ আজমত উল্লা খান নয়তো মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীক পাবেন। অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলীয় নৌকা প্রতীক পান এডভোকেট আজমত উল্লা খান।
এতে হতাশ হন জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী সমর্থকরা। নৌকা প্রতীক পেয়ে চাঙ্গা হন আজমত উল্লা খানের সমর্থকরা। এদিকে নৌকা না পেয়ে জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচন করবেন কিনা এমন সংবাদ নিশ্চিত হতে জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষজন ভীড় জমাতে থাকলে তাদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর আলম ঘোষণা দেন, তিনি মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
ঈদের আগের রাতে জাহাঙ্গীর আলম তার ফেসবুক লাইভে এসে নগরবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করেন। জাহাঙ্গীর আলম ঈদ শুভেচ্ছায় বলেন, সামনে আমার একটা পরীক্ষা দেয়ার সময়, আমি পরীক্ষাটা দিতে চাই, আমি কি ভালো করেছি, কি খারাপ করেছি, নগরবাসীর কি উন্নয়ন করেছি, না তাদের ক্ষতি করেছি, সেই হিসেবে আমি পরীক্ষার মাঠে থাকতে চাই। আমাকে যেহেতু নগরের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছে সেই হিসেবে আমি তাদের কাছে সেটা প্রত্যাশা করি। তিনি আরো বলেন, আমি প্রত্যেকটা নাগরিককে অনুরোধ করবো তারা যেন সৎ দক্ষ এবং তাদের জন্য পরিক্ষিত মানুষকে ভোট দেয়, কোন ভাবেই যেন কোন অন্যায়কারীকে, কোন মুখোশধারীকে ও কোন অভিনয়কারীকে কেউ যেন ভোট না দেয়। জাহাঙ্গীর আলমের ঈদ শুভেচ্ছার পর পর আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানও ফেসবুক লাইভে এসে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে ঈদ শুভেচ্ছা জানান দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে। ঈদের দিন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক পাওয়া আজমত উল্লাহ খানের টঙ্গী বাজার ভরানের বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে। ঈদ শুভেচ্ছা জানাতে আসা টঙ্গীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরনও আসেন তার এলাকার লোকজন নিয়ে আজমত উল্লা খানের বাসভবনে। গাজীপুর সিটির মেয়র পদের প্রার্থী নৌকা প্রতীক চাওয়া আসাদুর রহমান কিরন এসময় আজমত উল্লা খানকে পূর্ণ সমর্থন জানান। এখানে ভোটারদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জোট নেতা সৈয়দ আতিক সিটিবাসীর প্রতি নৌকায় ভোট চান আজমত উল্লা খানের পক্ষে।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা খানের দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলছেন, আজমত উল্লা খান টঙ্গী পৌর সভার পরীক্ষিত একজন সফল চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন। তিনি দক্ষভাবে ১৮ বছর টঙ্গী পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়েছেন। তিনি গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হলে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেবেন পুরো নগর জুড়ে।
অপরদিকে গাজীপুর মহানগরের ছয়দানা হারিকেন এলাকাস্থ জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে সারাক্ষণ নেতাকর্মীদের ভীড় লেগেই আছে। জাহাঙ্গীর আলমের বাসভবনে আসা মানুষজনরা বলছেন, জাহাঙ্গীর আলম পুনরায় গাজীপুর সিটির মেয়র হলে ভালো হবে। উন্নয়ন হবে নানা অবকাঠামোর। রাস্তাঘাট হবে বড় আর চওড়া। নগরীর উন্নয়ন একমাত্র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষেই সম্ভব। জাহাঙ্গীর আলমের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত হলে গাজীপুর সিটি হবে একটি স্বপ্নের নগরী।
গাজীপুর সিটির ভোটাররা নানা হিসেব-নিকেশ মেলাতে থাকলেও কে হবেন গাজীপুরের নগর পিতা তা সময়ই বলে দেবে, বলছেন গাজীপুর সিটির পর্যবেক্ষক মহল।
আগামী ২৫ মে গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল বৃহষ্পতিবার (২৭ এপ্রিল)। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই হবে ৩০ এপ্রিল এবং প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৮মে। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৯ মে। এবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭২১জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪২ জন এবং হিজড়া ১৮ জন। গত ৫ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কপোর্রেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন।
###
মোঃ রেজাউল বারী বাবুল
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
২৮/০৪/২০২৩ ইং।