স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আলোচিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আপিলেও তার মনোনয়নপত্রের বৈধতা পাননি। রিটার্নিং কর্মকর্তার বাতিলের পর আপিলেও সেই আদেশ বহাল রেখেছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার। বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে আপিলের শুনানি শেষে বাতিলের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শুনানিতে অংশ নেওয়া রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও সিটি নির্বাচনে মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন খান। তবে বিভাগীয় কমিশনারের ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রীট করবেন বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর।
নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন খান বলেন, গত ৩০ এপ্রিল গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের এবারের নির্বাচনে যাচাই বাছাইয়ে মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমসহ ২৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদের একজন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের ৫জন সহ মোট ৭জন তাদের মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপীল করেন। বৃহষ্পতিবার ওই আপীলের শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। আপীলের শুনানিতে জাহাঙ্গীর আলম দুইজন আইনজীবীসহ উপস্থিত ছিলেন। তারা পুনরায় তফসিলিকরণের জন্য টাকা জমা দেওয়া এবং জামিনদার খেলাপি হয় না বলে দাবি করেন। কিন্তু শুনানিতে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি জানান, আপিলকারীগণ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী এখনো ঋণ খেলাপি। জাহাঙ্গীর আলম যে প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার, সেই ঋণ এখনো পুনরায় তফসিলিকরণ হয়নি। পরে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাঙ্গীর আলমসহ অন্য প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় ঋণ খেলাপি ছিলেন। তাই তারা পরে টাকা জমা দিলেও তারা খেলাপি।
মঞ্জুর হোসেন আরও বলেন, উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আপীলকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমসহ ঋণ খেলাপির কারণে মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া আদেশ বহাল রাখেন। তবে কাউন্সিলর পদে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী নামে এক প্রার্থীর টাকা জমার রশিদে কোড নম্বর ভুল থাকায় বাতিল হওয়া তার মনোনয়নটি বৈধ ঘোষণা করা হয়। তিনি জানান, বাতিল হওয়া মনোনয়ন পত্রের বিষয়ে আপীল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চ্থড়ান্ত। তবে আপীল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে আবেদনকারী হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবেন।
এদিকে, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের এ আদেশে গাজীপুরে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। জাহাঙ্গীরের পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। অপরদিকে জাহাঙ্গীর সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক হতাশা।
বৃহষ্পতিবার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের আদেশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। সিআইবি রিপোর্টের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এবং ঋণ পুনঃতফসিল থাকার পরও অন্যায় ও একতরফাভাবে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমি ন্যায় বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাব, হাইকোর্টে রীট করব। প্রয়োজনে জনগণের ও নগরীর স্বার্থে বিষয়টি নিয়ে আমি সুপ্রীম কোর্টেও যাব।
অপরদিকে বিভাগীয় কমিশনারের এ আদেশের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলম উচ্চ আদালতে আপীলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থক ও ঘনিষ্টজনেরা।
জেলা নির্বাচন অফিসার ও গাসিক নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের এবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৫ মে। নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র পদে ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত ৩০ এপ্রিল যাচাই বাছাই শেষে এদের মধ্যে মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সহ তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বাছাই শেষে জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনের সহ মেয়র পদের অবশিষ্ট ৯জনের মনোনয়ন পত্র বৈধ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। খেলাপি ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এছাড়াও বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য পদে ৮২ জনের মধ্যে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২৮৯ জনের মধ্যে ১৭ জনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আগামী ৭ মে প্রার্থীতা (মনোনয়নপত্র) প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে ৯ মে। আগামী ২৫ মে সকাল ৮টা হতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সর্বশেষ হালনাগাদকৃত ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন, মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। নির্বাচনে ভোট গ্রহনের জন্য মোট ৪৮০ টি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে মোট ভোট কক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭ টি, এরমধ্যে ৪৯১ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে।
###
স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।
০৪/০৫/২০২৩ ইং।