ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থাপনাগুলোর ভেতর ও বাইরে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্ত চলছে। ফুটেজে চিহ্নিত হচ্ছে হামলার সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত আছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার সময় প্রায় সব ঘটনায় বহিরাগতরা অংশ নিয়েছিল। কেউ কেউ ভিনদেশি বলে তদন্তে বেরিয়ে আসছে। বিষয়টি আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া হামলার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাও রয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, থানার ভেতর ও বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু ফুটেজে ভিনদেশি কিছু লোকের অস্থিত্ব মিলেছে। আবার আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। বহিরাগতও আছে অনেক। তারপরও বিষয়টি আমরা আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করছি। আশা করছি, পুলিশের স্থাপনা ও সদস্যদের হত্যাকান্ডের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছে তাদের দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে এসব ঘটনায় থানায় মামলা বা জিডি হয়নি। তবে গত দুই মাসের ব্যবধানে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় তদন্ত করতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিটপ্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
তবে কোনো নিরপরাধ লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে ‘বিশেষ নির্দেশনা’ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে ও পরে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পাশাপাশি একদল দুর্বৃত্ত থানা ও ফাঁড়িসহ পুলিশের একাধিক স্থানে হামলা চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে ও ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার বাইরে ও ভেতরে এবং আশপাশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। কিছু দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হামলার ঘটনার বেশিরভাগ মামলার বাদী পুলিশ নিজেই। ইতিমধ্যে পুলিশের স্থাপনায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনায় সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০০-এর বেশি পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যদের বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাণ্ডবলীলা চালাতে সহায়তা করেছেন। আবার কেউ কেউ সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নানা উপায়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ইতিমধ্যে শিক্ষার্থী ও নিরীহ লোজনকে হত্যা করার মামলা হয়েছে। ওইসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন পেশার লোকজন আসামি হয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশের স্থাপনা ও পুলিশ সদস্যদের হত্যার ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে অনেক কিছু মিলছে। যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে হামলার সঙ্গে ভিনদেশি কেউ কেউ সম্পৃক্ত থাকতে পারে। তাদের ছবিগুলো পুলিশ পর্যালোচনা করছে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরীহ শিক্ষার্থী ও জনতাকে হত্যাকা-ের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত ৯৫২ জনের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে আরও ২১২ জন কর্মকর্তাসহ অন্য সদস্যদের বরখাস্ত ও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা প্রায় চূড়ান্ত করে আনা হয়েছে।