৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হলো বিশ্ব ক্যানসার দিবস। প্রতিবছরের মতো এবারও সারা দেশে দিবসটি পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। মানুষের শরীরে নানা ধরনের ক্যানসারের মধ্যে খাদ্যনালির ক্যানসার নীরব ঘাতক হিসেবে বিবেচিত হয়।
খাদ্যনালির ক্যানসার কী : খাদ্যনালি হলো মানুষের মুখগহ্বর থেকে পাকস্থলীর সঙ্গে সংযোগকৃত ফাঁকা নল। খাদ্যকে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেওয়াই এর কাজ। খাদ্যনালির অভ্যন্তরে টিউমার বা প্রদাহ থেকে এ ক্যানসার হতে পারে। খাদ্যনালির ক্যানসার চার ধরনের। যেমন স্কোয়ামাস সেল, এসোফ্যাগাস ও কারসিনোকার্সিনোমা, স্মল সেল আনডিফারেনশিয়েটেড ও কার্সিনোমা এবং কারসিনাকোর্সিনোমো। তবে সবচেয়ে বেশি যে ধরনটি দেখা যায় তা হলো স্কোয়ামাস সেল এবং এতে ৯০ শতাংশের বেশি আক্রান্ত হয়। এটির স্থায়ীত্ব দীর্ঘ হয়। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা গেলে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
জিইআরডি : এটি একটি হজমজনিত ব্যাধি, যা তৈরিকৃত অ্যাসিড যকৃত ভাঙতে সাহায্য করে এবং খাদ্য প্রক্রিয়ায় সহায়তার সঙ্গে খাদ্যনালিতে ধাক্কা দিতে শুরু করে। দীর্ঘস্থায়ী জিইআরডি খাদ্যনালিতে ক্যানসারের কারণ হতে পারে; খ) খাদ্যের নিয়মিত রুটিনে তামাক, অ্যালকোহল, পুষ্টিকর খাবারের তুলনায় ফাস্টফুড বেশি গ্রহণ করা; গ) পেটের যে কোনো হজমজনিত সমস্যা; ঘ) কোন প্লাস্টিক, কেমিক্যাল, রাসায়নিকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন কাজ করায় এ ক্যানসার হতে পারে; ঙ) ঘনঘন বা অবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন গরম পানীয় পান করা।
লক্ষণ : শক্ত খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এবং পরবর্তীকালে তরল খাবার খেতে, এমনকি ঢোক গিলতে কষ্ট হয়। হজমে সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, বারবার ঢেকুর তোলা, পেটব্যথা ইত্যাদি বারবার হওয়া। অরুচি, ওজন কমে যাওয়া। কাশি, রাতে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথা। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া। তবে এ লক্ষণগুলো সাধারণ হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, এটা ক্যানসারের পর্যায়ে যেতে পারে।
প্রতিরোধ : ধূমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্য বর্জন করুন। ফাস্টফুড, জাংকফুড, চর্বি ও অ্যালকোহল জাতীয় খাবার বর্জন করুন। প্রচুর শাকসবজি ও ফল খান। পরিমিত পুষ্টিকর খাবার ও হাঁটাচলার মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখুন।
প্রতিকার বা চিকিৎসা : চিকিৎসা পদ্ধতিটি কোষের ধরনের ওপর নির্ভর করে। তবে সব থেকে সাধারণ চিকিৎসা হলো সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, রেডিওথেরাপি।
সতর্কতা : যদি সঠিক সময়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকার হার ৪৭ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। আর যদি ক্যানসার প্রগতিশীল থাকে, তবে বেঁচে থাকার হার ২৫ শতাংশে নেমে আসে।
২০২০ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরে ২১ হাজার ৭৪৫ জন খাদ্যনালির ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে। এই ক্যানসারে নারীদের তুলনায় পুরুষ বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারলে এ ঘাতকব্যাধি বা খাদ্যনালি ক্যানসার থেকে ভালো ও বেঁচে থাকা যায়।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট
সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ
ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা