শুক্রবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কৌশলে সফল বিএনপি

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২
  • ৮৫ বার পঠিত

বাংলাদেশে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য ও সমাবেশের মধ্য দিয়ে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি।

বিএনপি’র পক্ষ থেকে সরকারের পতন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ এমন সব দাবি তুলে ধরা হচ্ছে, যেগুলো মানার সুযোগ নেই বলে আগেই নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

এসব দাবিতে এর আগে আন্দোলনে নেমে ব্যর্থতার ইতিহাসও রয়েছে বিএনপি’র।

কিন্তু তাহলে এসব দাবিতে আন্দোলন করে ঠিক কী অর্জন করতে চায় বিএনপি? আর বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব দাবি আদায় করা দলটির জন্য কতটা বাস্তবসম্মত?

বিএনপি’র দাবিগুলো কী?

বিএনপি যেসব বিভাগীয় সমাবেশ করছে সেখানে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, জ্বালানীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন রকম দাবি তুলে ধরা হয়েছে।

তবে সমাবেশগুলোতে মোটাদাগে চারটি দাবি’তে কঠোর আন্দোলনের কথা বলছেন দলটির নেতারা।

সেগুলো হচ্ছে- সরকারের পতন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের সাজা মওকুফ করে দেশে ফেরানো।

দলটির নেতারা বলছেন, এসব দাবি আদায় না হলে আন্দোলন সফল হবে না।

কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন এসব দাবি আগেই নাকচ করে দিয়েছে, তখন বিএনপি’র পক্ষ থেকে আবারো এসব দাবি তুলে ধরা নিয়ে নানা আলোচনা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এসব দাবি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব তা নিয়েও সংশয় আছে।

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এবং দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলছেন, বিএনপি’র দাবি শতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য।

তিনি বলেন, যে দাবিগুলো আমরা করছি যেমন সরকারের পদত্যাগ, নতুন সরকারের অধীনে নির্বাচন যেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার এগুলো সবই বাস্তবায়নযোগ্য। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা জনগণের দাবি বা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারবো কি-না। আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে, এই দাবি পূরণ করা আমাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না।

সরকার পতনের সক্ষমতা বিএনপি’র আছে?

বিএনপি’র শীর্ষ দুই নেতা খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়া আছেন কারাগারে আর তারেক রহমান দেশের বাইরে।

অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ২০১১ সালে। এটা ফেরাতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আওয়ামী লীগ যেটা করবে না বলেই জানিয়েছে আরো আগে।

অন্যদিকে কারাবন্দী এবং সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ কিংবা কারামুক্তি এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।

তবে বিএনপি মনে করছে, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাতে পারলে এসব দাবি পূরণের পথ এমনিতেই খুলে যাবে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি’র সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যে পর্যায়ে দেশটা এখন এসেছে, জনগণের কাছে এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, যারা ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা কোনো ভাবেই জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে না এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, তারেক রহমানকে দেশে ফেরাতে হলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে হলে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একমাত্র উপায় হচ্ছে রাস্তার আন্দোলনের মাধ্যমে এদের পতন ঘটিয়ে একটা নির্বাচিত সরকারকে আনতে হবে।

কিন্তু সরকার পতনের ক্ষমতা কি বিএনপি’র আছে?

এই প্রশ্ন উঠছে, কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরকারের পতন কিংবা পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন বেশ প্রচলিত।

তবে এভাবে আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানোর নজির গত তিন দশকে নেই। আওয়ামী লীগের একটানা তৃতীয় দফার শাসনেও সেরকম কোনো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি বিএনপি।

বরং ২০১৮ সালে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। বিএনপি’র সাংগঠনিক দুর্বলতাও স্পষ্ট।

তবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, বিএনপি’র কর্মসূচিতে লোকসমাগম হচ্ছে। তার মতে, বিএনপি’র দাবি এখন ‘জনগণের দাবি’ এবং জনগণই সরকারকে ‘ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করবে’।

কঠোর দাবির নেপথ্যে আন্দোলন চাঙা করা
বিএনপি যে সমাবেশগুলোতে কড়া বক্তব্য দিচ্ছে এবং সরকার পতনের কথা বলছে, তার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের জন্য উজ্জীবিত করা।

বিএনপি’র সমাবেশগুলোতে লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে এবং বাধার মধ্যেও নেতা-কর্মীদের মাঠে নেমে আসা দলটির নেতাদের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে আশাবাদী করে তুলছে।

বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলছেন, দলটির সুস্পষ্ট কর্মসূচি এবং দাবি-দাওয়ার কারণে নেতা-কর্মীরা চাঙা হয়েছেন।

তিনি বলেন, বিএনপি এখন তার অবস্থানটা একেবারে পরিস্কার করে দিয়েছে যে এই সরকারের অধীনে আসলে কোনো নির্বাচন হবে না। সেই নির্বাচনে যাওয়াও যাবে না।

এটা যখন পরিস্কার হয়েছে যে বিএনপি এদের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। যে সন্দেহটা ছিল এখানে সেটা কেটে যাওয়ার পরে এবং এদের সরাতে হলে একমাত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই সরাতে হবে। এটা স্পষ্ট হতেই কিন্তু তখন জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছে।

জনগণ মেসেজটা পরিস্কার পেয়েছে, তারপর রাস্তায় নেমেছে এবং এই আন্দোলনের যে জোয়ার এসেছে তার কারণ হচ্ছে এটা সরকার পতনের কোনো বিকল্প নাই।

বিএনপি আশাবাদী, আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।

কিন্তু এরকম আশাবাদ অতীতেও দেখা গেছে এবং আওয়ামী লীগও অতীতের মতোই তাদের ভাষায় হুঁশিয়ারি দিচ্ছে সরকার পতনের চেষ্টা হলে সেটা দমন করার।

তবে সামনে পরিস্থিতি যেটাই ঘটুক, এটা স্পষ্ট যে কঠোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে লোকসমাগমের যে কৌশল বিএনপি নিয়েছিল, সেখানে তাদের সফলতা দেখা যাচ্ছে।

বিএনপি’র অর্জন আপাতত এটাই।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com