বৃহস্পতিবার, ০২:২৯ অপরাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কুরআন-হাদিসের দৃষ্টিতে তাওবাহ ও ইস্তিগফার

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪
  • ৫২ বার পঠিত

আল্লাহ ভালোবেসে মানুষকে নিথর মাটি থেকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন ও সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। তিনি মানুষের কাছে টাকা-পয়সা চান না। চান না ধনদৌলত। তিনি শুধু চান মানুষের আনুগত্য ও ইবাদত। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত: ৫৬)। কিন্তু মানুষ যেহেতু শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ লঙ্ঘন করে বসে, আল্লাহ তায়ালার মর্জি মোতাবেক চলার ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে, তাই আল্লাহ তায়ালা তার সে ভুল বা গুনাহ থেকে মুক্তিদানের জন্য তাওবাহ ও ইস্তিগফারের ব্যবস্থা রেখেছেন। এই তাওবাহ ও ইস্তিগফার একজন মুমিনকে দান করে নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ জীবন। মুমিনকে সর্বদা গুনাহমুক্ত জীবনের প্রতি করে অনুপ্রাণিত। মুমিনকে নিয়ে যায় ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে উন্নতি ও মর্যাদার সুউচ্চ শিখরে।

আল্লাহ কুরআনের বহু জায়গায় তাওবাহ ও ইস্তিগফারের আলোচনা করেছেন। ১. (তরজমা) ‘তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি তাওবাহ কবুলকারী।’ (সূরা নসর, আয়াত: ৩)। ২. ‘আর আল্লাহ এমন নন যে তাদের আজাব দেবেন এ অবস্থায় যে তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ (সূরা আনফাল, আয়াত: ৩৩)। ৩. ‘আর তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মুমিন নর-নারীর ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯)। ৪. ‘সুতরাং বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ইস্তিগফার করলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি ঝরাবেন। তিনি তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পূর্ণ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত তথা বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদ-নদী।’ (তূরা নূহ, আয়াত: ১০-১২)। ৫. ‘আর যে ব্যক্তি মন্দকাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১১০)। ৬. ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তার আনুগত্য মোতাবেক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের ওপর বড় একদিনের আজাবের ভয় করছি।’ (সূরা হুদ, আয়াত : ৩)। ৭. ‘আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১০৬)। ৮. ‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; এরপর তার কাছে তাওবাহ করো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সূরা হুদ, আয়াত : ৫২)।

নবী সা: প্রতিদিন ইস্তিগফার করতেন। হাদিসের অনেক বর্ণনাতেও ইস্তিগফারের কথা এসেছে:

১. হজরত উমর রা: বলেছেন, ‘আমরা এক মজলিসে গণনা করতাম। রাসূলুল্লাহ সা: একশবার বলতেন, ‘রাব্বিগফিরলি, ওয়া তুবু আলাইয়্যা; ইন্নাকা আনতাত তাউয়্যাবুর রাহিম।’ অর্থাৎ, হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার তাওবাহ কবুল করো; নিশ্চয় তুমি তাওবাহ কবুলকারী ও দয়াশীল।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)।

২. রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন। যদি তোমরা গুনাহ না করো, তবে আল্লাহ তোমাদের নিয়ে যাবেন; এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন; যারা গুনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তাওবাহ করবে। এর পর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)।

৩. হজরত আলী রা:-কে একজন এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল, যে গুনাহ করে তাওবাহ করে; আবার গুনাহ করে। আবার তাওবাহ করে আবার গুনাহ করে। আবার গুনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তাওবাহ-ইস্তিগফার করে। এমন করতে থাকা ব্যক্তির কী অবস্থা হবে? হজরত আলী রা: বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সবসময় তাওবাহ-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তাওবাহ- ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গুনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।

৪. হজরত আবদল্লাহ ইবনে উমর রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তাওবাহ করতে থাকো। কেননা আমি নিজে দিনে একশ’বার তাওবাহ করি।’

৫. হজরত আবু আইয়ুব রা: বলেছেন, আমি নবীজি সা:-এর কাছে এ কথা শুনেছি যা তোমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছিলাম; তিনি বলেছেন, যদি তোমরা গুনাহ করে আল্লাহ তায়ালার মহান দরবারে তাওবাহ-ইস্তিগফার না করতে, তবে আল্লাহ তায়ালা এমন এক মাখলুক সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আল্লাহ তায়ালার দরবারে তাওবাহ করত, তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করতেন। (মুসলিম)

৬. নবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার (তাওবাহ) করবে, আল্লাহ ওই বান্দাকে তার সব সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

লেখক :

  • মুস্তাফিজ বিন হাবিবুল্লাহ

শিক্ষার্থী, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com