পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সমুদ্র রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণে মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়ার অভিযোগে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) বিকেলে বালু দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় স্কেভেটর মেশিনের চাবি নিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন।
কুয়াকাটা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদ দেওয়ান বলেন, রাতের আঁধারে এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে ওপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করছিল। স্থানীয়দের মাধ্যমে এই খবর পেয়ে আমি বিকেলে এখানে আসি। এসে দেখি রাস্তার একপাশ থেকে বালু তুলে অন্য পাশে দিচ্ছে, তার ওপর মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে যাতে কেউ না দেখে। সঙ্গে সঙ্গে আমি কাজ বন্ধ করে মেয়র ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানাই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুকুমণি স্টোর রাস্তা নির্মাণের কাজ নিয়ে সব জায়গায় বালু দিয়ে কাজ করছে। বারবার নিষেধ করলেও শুনছে না। দিনে কাজ না করে বেশিরভাগ সময় রাতের আঁধারে কাজ করছে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা বশির হোসেন বলেন, আমরা এই উপকূলের মানুষ প্রতিবছর ঝড়-ঝাপটার মধ্যে বসবাস করি। এই যে বালু দিয়ে রাস্তা করছে তাতে একবার বৃষ্টি বা সাগরের পানি বৃদ্ধি পেলেই এই রাস্তা শেষ হয়ে যাবে। এই রাস্তা যেন ঠিকভাবে করা হয় সেই দাবি জানাই।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় এলাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় এলাকায় ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি টাকা। এই কাজে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পেয়েছেন অনেকগুলো সহযোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে এই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে কলাপাড়ার খুকুমণি স্টোরের বিরুদ্ধে।
এনিয়ে খুকুমণি স্টোরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. খোকন বলেন, আমরা বালু দেই না। কিন্তু মাঝে মাঝে মাটির সঙ্গে কিছু বালু যায়। তারপরও গতকাল কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বালু যে দেবো, বালু পাবো কোথায়? এখন মাটির চেয়ে বালুর দাম বেশি পড়ে।
উপকূলীয় এলাকার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরামর্শক মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের রাস্তায় মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়ার সুযোগ নেই, তবে যে বালুটা দেওয়া হয়েছে তার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বালু সরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে।
রাতের বেলা বালু দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে রাস্তায় অনেক বাস থাকে, যে কারণে রাতে কাজ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, মাটির সঙ্গে সামান্য বালু থাকলেও পুরোপুরি বালু দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মাটি ছাড়া বালু দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।