পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের হাতেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলাম (৫৯) এর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
সন্ত্রাসী হামলার জন্য নজরুল ইসলামের পরিবার মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন ও তার লোকজনকে দায়ী করেছেন। তবে শ্রমিকলীগ নেতা দাবি করেছেন প্রধান শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলাম তার লোকজনকে মারধর করেছেন। এ সময় তিনি উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করেছেন।
জি এম নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির মহিপুর থানা শাখার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। তার পরিবার জানায়, তিনি ২০১৬ সাল থেকে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত। তিনি বেশ কয়েকবার ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিক্ষক জি এম নজরুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে মারধর করার দৃশ্য দূর থেকে দেখে এগিয়ে আসলে আমাকেও জামাল হোসেনের লোকেরা মারধর করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নজরুল ইসলাম আলীপুরের বাসা থেকে নিজের কর্মস্থল হাতেমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি দেখেন তার বাসার সামনে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালের নিচ থেকে কয়েকজন মিলে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ঘটনায় তিনি প্রতিবাদ করেন এবং নিজের মুঠোফোন দিয়ে মাটি কাটার দৃশ্যের ছবি তোলেন। এতে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িতরা উত্তেজিত হয়ে তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা এলোপাতাড়ি লাথি কিলঘুষি মারে।
এতে তিনি ঘটনাস্থলেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। হামলাকারীরা তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। স্বামীকে মারধর করার দৃশ্য দেখে স্ত্রী নার্গিস বেগম এগিয়ে আসলে তাকেও জামাল হোসেনের লোকেরা মারধর করে বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জি এম নজরুল ইসলামকে উদ্ধার করে কুয়াকাটার ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেন। ঘটনার দুই ঘণ্টা পরও তার জ্ঞান না ফেরায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত টিকিৎসক তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। বর্তমানে তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক আশিকুর রহমান বলেন, ‘তার শরীরের ওপরের দিকে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে সে চাপা মার খেয়েছে। কিলঘুষির কারণে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী। তার জ্ঞান না ফেরায় আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি।’
মহিপুর থানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা বাঁধের কাজের জন্য মাটি কাটছিলাম। এ নিয়ে তার আপত্তি করার কিছু নেই। তিনি হঠাৎ করে এসে ছবি তুলেন এবং গালিগালাজ করেন। আমার লোকজন প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের মারধর করেন। আমি উপস্থিত থেকে ভিডিও ধারণ করেছি এবং আমার লোক তার গায়ে হাত দেয়নি। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ রোগী বিধায় আমার লোকজনকে মারধর করতে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কলাপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল আলম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঢালের নিচ থেকে গভীর করে প্রভাবশালীরা মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রধান শিক্ষক প্রতিবাদ করেন।
এরপর মাটি কাটার দৃশ্য নিজের মুঠোফোন থেকে ধারণ করেন। এতে প্রধান শিক্ষকের কোনো অন্যায় হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, প্রধান শিক্ষক সামাজিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছেন। উল্টো সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে আহত করেছেন। আমরা এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার মো.আবুল খায়ের বলেন, শিক্ষককে মারধরের খবর শুনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। শিক্ষকের পরিবার অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।