মঙ্গলবার, ১১:৪৩ অপরাহ্ন, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কুমিল্লার পাদুয়ার প্রতি হাটে মাছ বিক্রি হয় ৬ কোটি টাকা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫
  • ৪ বার পঠিত

জেলার ঐতিহ্যবাহী অস্থায়ী মাছের বাজার পদুয়ার বাজার। সপ্তাহে দুদিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য সড়কের ওপর বসা এ অস্থায়ী প্রতি হাটে বেচাবিক্রি হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। কমদামে দেশি ও সামদ্রিক মাছ কিনতে প্রতি হাটে থাকে মানুষের উপচেপড়া ভিড়।

কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ থেকে লাকসাম সড়কের ওপর প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে পদুয়ার বাজার এ মাছ বাজারটিতে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য হাট বসে সড়কের ওপর। বিকেল থেকে শুরু হওয়া বাজার শেষ হয় রাত ৯/১০টার দিকে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ আসে এ হাটে। সরবরাহ বেশি ও এক হাটে সব রকমের মাছ পেয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সাপ্তাহিক বাজার করে নেন ক্রেতারা। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের হাকডাকে সরগরম এ বাজার।

ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, এখানে প্রতি হাটে ছোট বড় প্রায় তিনশ দোকান বসে। দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ মেট্রিক টন মাছ বিক্রি হয় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে। যা প্রায় ছয় কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়। সপ্তাহে দুদিন করে মাসে আট থেকে দশটি বাজার বসে পদুয়ায়।

কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসে দেশি মাছ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রুই কাতল, শিং, মাগুর, কৈ, টাকি, শোল, টেংরা, পাবদা, পুঁটি, বোয়াল, আইড়, বাইন, গজার প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, মৃগেল, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড ও কমনকার্প মাছ। এ বাজারে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা আনেন ইলিশ। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের ব্যবসায়ীরা আনেন সামুদ্রিক মাছ। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে রয়েছে চাপিলা, লইট্যা, সুরমা, কোরাল, টুনা, রূপচাঁদা, বাটা, বাইলাসহ অন্যান্য মাছ। সামুদ্রিক কাঁকড়াও বিক্রি হয় এখানে।

কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়, টমছম ব্রিজ শাকতলা, জাঙ্গালিয়া, কচুয়া চৌমুহনী, সদর দক্ষিণ উপজেলার রাজাপাড়া, দিশাবন্দ, নোয়াগাঁও, মোস্তফাপুর, বেলতলি, কোটবাড়ি, সুয়াগাজী, মিয়াবাজার, চৌয়ারা, কালিকাপুর, লালমাই, বাগমারা, বিজয়পুর, বিজরা, মুদাফফরগঞ্জ, পিপুলিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলার ক্রেতারা মাছ কিনতে আসেন এখানে।

সড়কের পাশে গাড়ি রেখে মাছ কিনেন অনেকে। বিয়ে, জন্মদিনসহ বড় অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার ও জেলার অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো পাইকারিতে মাছ সংগ্রহ করেন পদুয়ার বাজার থেকে। সব ধরনের মাছ এ বাজারে একসাথে পাওয়া যায়। মাছের সরবরাহ বেশি থাকে বলে ক্রেতারা ছুটে আসেন এ বাজারে।

ফলে মাছের সরবরাহ বেশি হওয়াই ক্রেতার সমাগমও ঘটে বেশি। তাই বেঁচা-বিক্রিতে খুশি ব্যবসায়ীরা। শুধু মাছের বেচা-বিক্রি নয়, এ বাজারে মাছ কেটেও জনপ্রতি আয় হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা।

নগরীর কালিয়াজুড়ি থেকে আসা ক্রেতা ফরহাদ হোসেন জানান, আমার বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। তাই এ বড় বাজারে আসলাম। এখানে সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। এখান ৭০ কেজি মাছ নিলাম। অন্যান্য বাজার থেকে মাছের দামও কিছুটা কম। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো।

নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, এখানে মাছের সরবরাহ বেশি, তাই আমাদের যেকোনো মাছ কিনতে বেগ পেতে হয় না। সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়, তাই সপ্তাহের মাছ বাজারটি থেকে সংগ্রহ করি।

সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী এলাকা থেকে আসা ক্রেতা ফরিদ উদ্দিন জানান, আমরা সাপ্তাহিক বাজারসহ যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠানের মাছ কিনতে হলে এখানে চলে আসি। দেশি সামদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরনের মাছ এ বাজারে আসে, তাই আমাদের প্রত্যাশাও পূরণ হয়।

নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার এক হোটেল ব্যবসায়ী আজাহারুল বিপুল জানান, শহরের প্রায় হোটেল ব্যবসায়ীরা শেষের দিকে পদুয়ার বাজারে মাছ কিনতে যায়। শেষ সময়ে মাছ ব্যবসায়ীরা কম দামে মাছ ছেড়ে দেন। এতে আমাদেরও সাশ্রয় হয়, আবার অস্থায়ী বাজারের ফলে মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের বেচাবিক্রি শেষ করে চলে যেতে পারে।

বাজারে মাছ কাটেন শাহ আলম নামে এক শ্রমিক জানান, প্রতি হাটে এখানে মাছের মেলা বসে, এ বাজার প্রতিহাটে আমরা ১৫ মণ এর বেশি মাছ কাটি, মাছ বেশি আসে, বিক্রিও হয় বেশি আর আমাদের আয় রোজগার ভালো হয়। প্রতি কেজি মাছ কাটতে প্রকারভেদে ১০ থেকে ৪০ টাকা করে নেই।

সিরাজ মিয়া নামে মাছ ব্যবসায়ী জানান, এখানে সরাসরি মাছ এনে বিক্রি করি। কোনো আড়তদার নেই। যা লাভ হয় নিজেরই থাকে। আর অস্থায়ী বাজার হওয়াই আমরাও সীমিত লাভে মাছ বিক্রি করে চলে যাই। সপ্তাহের বাজারে ভালোই আয় হয়।

মাছ ব্যবসায়ী শাহাজান মিয়া বলেন চট্টগ্রাম ফিসারি ঘাট থেকে সামদ্রিক মাছ নিয়ে আসেন প্রতি হাটে। এ মাছের চাহিদাও আছে ভালো, তাই বেচাবিক্রিও ভালো। প্রায় ২০ ধরনের সামদ্রিক মাছ নিয়ে পসরা বসিয়েছেন তিনি।

দাউদকান্দি থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী জুলহাস মিয়া জানান, স্থানীয় দাউদকান্দি মাছের প্রজেক্টসহ চান্দিনা ও আশপাশের এলাকা থেকে মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। দেশি মাছের চাহিদা ভালো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাছ বিক্রি করে চলে যাই।

এ বাজারে মাছ কাটেন মিলন মিয়া নামে একজন বলেন, সাপ্তাহে দু দিন আমরা এ বাজারে মাছ কাটতে আসি, আমার সব শ্রমিক ও অন্যান খরচ বাদ দিয়ে সাপ্তাহে ৫/৬ হাজার টাকা লাভ হয়। মাসে আমার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা রোজগার হয়।

এ বাজারের ইজারাদার মো. কামাল হোসেন জানান, প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য এ বাজারটি। প্রতি সাপ্তাহে এ বাজারে প্রায় দুশতাধিক মাছের দোকান বসে এখানে। কোনো আড়তদার নেই, আমরা সামান্য পরিমাণ খাজনা নেই।

যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়াই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে স্বাচ্ছন্দে এখানে বেচাবিক্রি করতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com