বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ লোক আসছে দেখে এখন গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে, কথা বললেই মামলা দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উদ্যোগে মহান বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র ও শহিদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
নোমান বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র আলাদা করে দেখা যায় না। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি রাষ্ট্র গঠনের জন্য। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম অর্থনীতির মুক্তির জন্য, জনগণের কথা বলা জন্য কিন্তু আজ জনগণের স্বাধীনতা নেই, কথা বলার অধিকার নেই। কথা বললেই মামলা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ লোক আসছে দেখে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এই সরকার এখন গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গ্রেফতার করছে। সরকার মামলা-হামলা দিয়ে জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করতে চায়, যাতে ভয়ে লোকজন জনসমাবেশে না আসে। এই হামলা-মামলা ও গ্রেফতার করে সমাবেশ ঠেকানো যাবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আটটি সমাবেশ হয়ে গেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আরেকটি সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশ হবে গণসমাবেশ। এই সমাবেশে যাতে লোক আসতে না পারে তার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার তাণ্ডব চালাচ্ছে।’
‘আমাদের সমাবেশের স্থান আমরা নির্ধারণ করবো। পল্টনে আমাদের সমাবেশ হবে। সেই সমাবেশে সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে এবং এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকারের পরাজয় হবে,’ বলেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এই সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওবায়দুল কাদেরের কথা শুনলে মনে হয় তার মধ্যে সেন্স নেই। আওয়ামী লীগের ধারণা বিএনপিকে দমিয়ে রাখলে আমরা আগের মতো থাকতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। দেশের সর্বত্রই গায়েবি মামলা হচ্ছে। ১০ তারিখের সমাবেশে কোন ব্যর্থয় ঘটলে এর জন্য সরকারকে দায় নিতে হবে। পল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দিন, কোনো ব্যত্যয় ঘটলে তার জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন।’
আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ শরণার্থী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িতে বাড়িতে লেখা থাকতো এই বাড়িতে রাজাকার নেই। এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশটাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছে এরা ক্ষমতা থেকে সরে গেল তাদের একই পরিণতি হবে যে বাড়িতে বাড়িতে লেখা থাকবে- এই বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেই।’
তিনি বলেন, এই সরকার দেশটাকে নোংরা অবস্থায় নিয়ে গেছে। সর্বজনীন কোনো ভোটাধিকার নেই। বাংলাদেশের টাকা মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকায় চলে যায়। মওলানা ভাসানী মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছিলেন- আওয়ামী লীগ তা মানতে রাজি নয়। শেখ হাসিনার একজন শিক্ষক মো: সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে আগের চেয়ে অনেক খারাপ অবস্থায় আছি। দ্রব্যমূল্যের সকালে যে দাম বিকেলে তার ভিন্ন চিত্র। ইসলামী ব্যাংকের চুরি আর দুর্নীতি দেখার অভিভাবক কেউ নেই।’
তিনি বলেন, ‘গায়েবি মামলা শুরু হয়েছে। আমরা সমাবেশ করার জন্য যে জায়গা চাই সে জায়গা না দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু সারাদেশে যা করছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটকে রেখে সেটা করবেন না তার কি নিশ্চয়তা আছে। পুলিশ আগের মতো মামলা দেয়া শুরু করেছে। অনেক লোক বিদেশে আছে তাদেরকেও মামলা দেয়া হয়েছে।’
‘যত জুলুম-নির্যাতন আসুক বিএনপির সমাবেশ পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে হবে,’ বলেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, জাতির মুক্তির মহানায়ক জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা মানুষ পেতে শুরু করেছিলেন। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে সবাইকে সেই আন্দোলন পালন করতে হবে।
তিনি বলেন,এই বিজয়ের মাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করছে। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে ভোটাধিকার হরণ করছে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, তাঁতীদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আব্দুল্লাহ আল বাকি প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।