বৃহস্পতিবার, ০১:৫৪ অপরাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

কঠিন সময়ে ঈমানের পরীক্ষা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ৫৮ বার পঠিত

জীবনে যখন কঠিন সময় আসে তখন মানুষের বিশ্বাসের পরীক্ষা হয়। মহান আল্লøাহ সূরা আনকাবুতে বলেছেন- ‘মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ঈমান এনেছি- এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেয়া হবে?’ মানুষের জীবনে যে বৈরী অবস্থা সেটি পরীক্ষারই একটি অংশ। এ সময়ে অনেকে তার বিশ্বাসে দৃঢ় থেকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। আবার অনেকের বিশ্বাসে চিড় ধরে। যারা দৃঢ় থাকেন তারা হন সফল আর যারা বিশ্বাস হারান তারা হন ব্যর্থ।

সব ঈমানদার বিশেষত নবীদেরকে এ জগতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। পরিশেষে বিজয় ও সাফল্য তাঁদেরই হাতে এসেছে। এসব পরীক্ষা জান ও মালের উপর ছিল। (ফাতহুল কাদির) এর মাধ্যমে তাদের ঈমানের দৃঢ়তার পরীক্ষা হয়ে যেত। কোনো সময় কাফের ও পাপাচারীদের শত্রুতা তাদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে হয়েছে। যেমন অধিকাংশ নবী এবং শেষনবী মুহাম্মদ সা: ও তাঁর সাহাবিরা প্রায়ই এ ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন। সিরাত ও ইতিহাসের গ্রন্থাবলি এ ধরনের ঘটনাবলি দিয়ে পরিপূর্ণ। কোনো সময় এই পরীক্ষা রোগ-ব্যাধি ও অন্যান্য কষ্টের মাধ্যমে হয়েছে। যেমন আইয়ুব আ:-এর হয়েছিল। কারো কারো ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার পরীক্ষার সমাবেশও করে দেয়া হয়েছে।

বর্ণনাদৃষ্টে বোঝা যায়, উপরে উল্লিখিত আয়াত সেসব সাহাবির ব্যাপারে নাজিল হয়েছিল, যারা মদিনায় হিজরতের প্রাক্কালে কাফেরদের হাতে নির্যাতিত হয়েছিলেন। কিন্তু এর উদ্দেশ্য অনেক ব্যাপক। সর্বকালের আলেম, সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন এবং হতে থাকবেন। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা: ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদেরকে, তারপর তাদের অনুরূপ, তারপর তাদের অনুরূপদেরকে। প্রত্যেক মানুষকে তার দ্বীনদারি অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। যদি দ্বীনদারি বেশি হয় তাকে বেশি পরীক্ষা করা হয়। (তিরমিজি-২৩৯৮, ইবনে মাজাহ-৪০২৩) কুরআনের অন্যত্রও এ পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে- যেমন বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি মনে করেছ তোমাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে অথচ, আল্লাহ এখনো তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদ করেছে তাদের জেনে নেননি।’ (সূরা আত-তাওবাহ-১৬)

যে অবস্থায় পরীক্ষা ছাড়া অব্যাহতি না দেয়ার কথা বলা হয় তা ছিল এই যে, মক্কায় কেউ ইসলাম গ্রহণ করলেই তার ওপর বিপদাপদ ও জুলুম-নিপীড়নের পাহাড় ভেঙে পড়ত। এ পরিস্থিতি যদিও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী সাহাবিদের অবিচল নিষ্ঠার মধ্যে কোনো প্রকার দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করেননি তবুও মানবিক প্রকৃতির তাগিদে অধিকাংশ সময় তাদের মধ্যেও চিত্তচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে যেত। এ ধরনের অবস্থার একটি চিত্র পেশ করে খাব্বাব ইবনে আরত বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেন, ‘যে সময় মুশরিকদের কঠোর নির্যাতনে আমরা ভীষণ দুরবস্থার সম্মুখীন হয়ে পড়েছিলাম সে সময় একদিন আমি দেখলাম নবী সা: কাবাঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসে রয়েছেন।

আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করেন না? এ কথা শুনে তাঁর চেহারা আবেগে-উত্তেজনায় রক্তিম বর্ণ ধারণ করল এবং তিনি বললেন, ‘তোমাদের আগে যেসব মুমিন দল অতিক্রান্ত হয়েছে তারা এর চেয়েও বেশি নিগৃহীত হয়েছে। তাদের কাউকে মাটিতে গর্ত করে তার মধ্যে বসিয়ে দেয়া হতো এবং তারপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে দুই টুকরো করে দেয়া হতো। কারো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সন্ধিস্থলের কসম, এমন কাজ সম্পন্ন হবেই যখন এমনকি এক ব্যক্তি সানা থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত নিঃশঙ্কচিত্তে সফর করবে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় তার মনে থাকবে না।’ (বুখারি-৩৬১২, মুসনাদে আহমাদ-৫/১০৯)

এ চিত্তচাঞ্চল্যকে অবিচল ধৈর্য ও সহিষ্ণুতায় রূপান্তরিত করার জন্য মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে বুঝান, দুনিয়া ও আখিরাতের সাফল্য অর্জনের জন্য আমার যে সব প্রতিশ্রুতি রয়েছে কোনো ব্যক্তি নিছক মৌখিক ঈমানের দাবির মাধ্যমে তার অধিকারী হতে পারে না; বরং প্রত্যেক দাবিদারকে অনিবার্যভাবে পরীক্ষা অতিক্রম করতেই হবে। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা কি মনে করেছ তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি, যে অবস্থার সম্মুখীন হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদাররা? তারা সম্মুখীন হয়েছিল নির্মমতা ও দুঃখ-ক্লেশের এবং তাদেরকে অস্থির করে তোলা হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছিল তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল-আল্লাহর সাহায্য আসবে কবে? (তখনই তাদেরকে সুখবর দেয়া হয়েছিল এই মর্মে যে) জেনে রাখো, আল্লাহর সাহায্য অতিনিকটেই।’ (সূরা আল-বাকারাহ-২১৪)

অনুরূপভাবে ওহুদ যুদ্ধের পর যখন মুসলমানদের ওপর আবার বিপদ-মুসিবতের একটি দুযোগপূর্ণ যুগের অবতারণা হয় তখন বলা হয়-‘তোমরা কি মনে করে নিয়েছে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করে যাবে, অথচ এখনো আল্লাহ দেখেনইনি যে, তোমাদের মধ্য থেকে কে জিহাদে প্রাণ উৎসর্গকারী এবং কে সবরকারী?’ (সূরা আলে ইমরান-১৪২) প্রায় একই বক্তব্য সূরা আলে ইমরানের ১৭৯, সূরা তাওবার ১৬ এবং সূরা মুহাম্মদের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে। এসব বক্তব্যের মাধ্যমে মহান আল্লাহ মুসলিমদের মনে এ সত্যটি গেঁথে দিয়েছেন যে, পরীক্ষাই হচ্ছে এমন একটি মানদণ্ড যার মাধ্যমে ভেজাল ও নির্ভেজাল যাচাই করা যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com