বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘গণতন্ত্র হত্যাকারী, মেগা মেগা প্রকল্প দিয়ে মেগা দুর্নীতি করা মেগা চোর, জনবিচ্ছিন্ন, রাতের ভোটের অবৈধ সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমেই পতন ঘটানো হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু এ চোর সরকার লাখো কোটি টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করেছে। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।’
শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের বেউথা এলাকায় জেলা বিএনপি ও সকল অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্বে করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা খান রিতা।
ড. মঈন খান বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি পরিবার দেশের সম্পদ লুট করে ধনী হয়েছিল। আর আজ এ অবৈধ সরকার ২২০টি লুণ্ঠনকারী পরিবার সৃষ্টি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে, বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের দল। এ কথাটি ডাহা মিথ্যা। বরং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। ২৫ মার্চের কালো রাতের সেই মহা সংকটের সময় আওয়ামী লীগের নেতারা পালিয়ে সীমান্ত পার হয়ে চলে গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ তখন ছিল একটা পলায়নপর দল। ঠিক সেই মুহূর্তে জাতিকে সঠিক নেতৃত্বে দেয়ার জন্য, দেশকে স্বাধীন করার জন্যে মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দেন। সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে তিনি বীর উত্তম খেতাব পান। আওয়ামী লীগের কয়জন মুক্তিযুদ্ধ করেছিল? তারা তখন জীবন নিয়ে পালাতে ব্যস্ত ছিল। আর আওয়ামী লীগ ১৯৭৫ সালে মাত্র ১১ মিনিটে সংসদে গণতন্ত্র হত্যা করে এ দেশে বাকশাল কায়েম করে। কিন্তু সেনাবাহিনীর মানুষ হয়েও জিয়াউর রহমান সেনাশাসন কায়েম না করে দেশের জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে, ভোটাধিকার নিশ্চিত করে এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’
‘আজ আবার সেই বাকশালী গোষ্ঠী গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। আন্দোলনের মাধ্যমেই নব্য বাকশালী এ রাতের সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
মঈন খান, ‘আওয়ামী লীগ জনমতকে ভয় পায়, গণতন্ত্রকে ভয় পায়, তাই তার সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে ভয় পায়। তারা জানে এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ১০% ভোটও পাবে না।’
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, ‘বিগত সময়ে বিএনপির ১০টি বিভাগীয় সমাবেশে লাখো কোটি মানুষ সমবেত হয়েছিল। এখানে শুধু বিএনপির লোক ছিল না, এখানে দেশের সাধারণ মানুষ জমায়েত হয়েছিল। এ জালিম সরকারের পতন শুধু বিএনপি নয়, এ দাবি এখন সমমনা দলগুলোসহ দেশের কোটি কোটি দেশপ্রেমিক জনগণের। তাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও গণতন্ত্র রক্ষা, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যেই এ সরকারকে বিদায় দিতে হবে।’
জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যে উন্নত দেশ গঠন করা শুরু করেছিলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, মানুষের ভোট-ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা এই অবৈধ ভোট চোর আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আর এ আন্দোলনের মূল ঘাঁটি হবে মানিকগঞ্জ।’
সকাল ১১টায় শুরু হয়ে সোয়া ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধনটি শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দখল করে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ্ কবীর, সহ-সভাপতিদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খান, অ্যাড. আতাউর রহমান ফরিদ, অ্যাড. জহির আলম লোদী, মো: আব্দুল বাতেন, অ্যাড. শামসুল আলম খান, মানিকগঞ্জ বারের সভাপতি অ্যাড. মেজবাউল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. নূরতাজ আলম বাহার, গোলাম কিবরিয়া সাঈদ, মো: ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন মো: নাসির উদ্দিন যাদু, আব্দুস সালাম বাদল, সত্যেন কান্ত পন্ডিত ভজন, গোলাম আবেদীন কায়সার, জিয়াউদ্দিন কবীর, মো: তুহিনুর রহমানসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।