বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহ আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ায় দুই নেতাকে শোকজ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। তারা হলেন – বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম ফারুখ ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাওলাদ হোসেন সানা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সাত কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নোটিশের সন্তোষজনক জবাব না দিলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৭ অক্টোবর বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস স্বাক্ষরিত নোটিশে এই শোকজ দেওয়া হয়। তাতে উল্লেখ করা হয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবহিত না করে কোন ক্ষমতাবলে তারা একজন সংসদ সদস্যকে শোকজ করেছেন তা নোটিশপ্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যাসহ লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শোকজের বিষয়ে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মাওলাদ হোসেন সানা বলেন, গত ২৯ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয়। সেখানে নেতাকর্মীরা সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। যে সভায় এমপি শাহে আলমও উপস্থিত ছিলেন। তখনই তাকে শোকজের সিদ্ধান্ত হয়। আর আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন সদস্যকে শোকজ নোটিশ দিয়েছি। সেখানে তো এমপি পদের কোনো বিষয় নেই। জেলা আওয়ামী লীগ আমাদের যে বিষয়ে শোকজ করেছে তার জবাবও আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেব।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে শোকজের পর একটি প্রতিবাদনামা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে সভাপতি-সম্পাদককে নিয়ে শুধু বিষদাগার করা হয়েছে। যদিও ওই প্রতিবাদনামায় যাদের স্বাক্ষর রয়েছে তাদের মধ্যে ৫ জনের বেশি নেতা জানিয়েছেন, তাদের নাম-পদবি ব্যবহার করে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে এটি ছড়ানো হয়েছে। আর এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বানারীপাড়া উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার ওই শোকজের কপিতে দেখা গেছে- বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে পয়েন্ট আকারে ১৭টি বিভিন্ন অভিযোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
যারমধ্যে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের জন্য গচ্ছিত টাকা আটকে রাখা, দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে নিজস্ব বলয় তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া, বানারীপাড়া পৌরসভাসহ দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে আলাদা কর্মসূচি করা, অনুসারী ও আত্মীয়স্বজন কর্তৃক উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ঠিকাদারি কাজ ভাগ করে দেওয়া এবং চাঁদা উত্তোলনের মতো বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।
অভিযোগগুলোর শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে কেন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না সেই বিষয়ে পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে সভাপতি-সম্পাদক বরাবর লিখিত জবাব দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
তবে এখন অবধি স্থানীয় সংসদ সদস্য শোকজের জবাব দেয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সংসদ সদস্য শাহে আলম তালুকদার জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের কোনো শোকজ চিঠিই পাননি।