রবিবার, ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
নোটিশ :
মানব সেবায় নিয়োজিত অলাভজনক সেবা প্রদানকারী সংবাদ তথ্য প্রতিষ্ঠান।

এনজিওমালিক ‘দুলাভাইয়ের প্রতারণায়’ শিশুকন্যাকে নিয়ে জেলে শরিফা

সময়ের কণ্ঠধ্বনি ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ৬৬ বার পঠিত

আদালতের সমন পড়েই আকাশ থেকে পড়েন শরিফা জাহান। জানতে পারেন- তার দুলাভাইয়ের মালিকাধীন এনজিও আদর্শ সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তিনি। গ্রাহকের সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আদালত তাকে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরপর আদালতের নির্ধারিত দিনে হাজিরা দিয়ে শরিফা জামিন আবেদন করেন আইনজীবীর মাধ্যমে। কিন্তু জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে শরিফাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমলি আদালতের বিচারক। আদালতে হাজিরার সময় শরিফার কোলে ছিল তিন বছরের শিশুকন্যা।  শিশুটিকে কোলে নিয়েই জেলে যান তিনি।

গত রোববার সন্ধ্যায় শরিফাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ। শরিফার বাড়ি সদর থানার রেহাইচর এলাকায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক দিলীপ কুমার দাস জানান, আদালতের  সম্মতিতে শরিফার সঙ্গে তিন বছরের শিশু কন্যাকেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ছোট্ট শিশুকে মায়েদের কারাগারে পাঠানো হয়। এটা মা ও শিশুর সুবিধার জন্যই করা হয়। অভিভাবকদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে আদালত মায়ের সঙ্গে থাকার সুযোগ দিয়েছেন শিশুটিকে।

শরিফা জাহানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহিদুল মূলক জানিয়েছেন, শিশুটির কোনো নিরাপদ স্থান না থাকায় মা শরিফা নিজ ইচ্ছায় কারাগারে নিতে চাইলে আদালত তাতে সম্মতি দেন।

কারাগারে যাবার আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গণে শরিফা জাহান জানান, তার দুলাভাই শফিকুল ইসলাম ‘আদর্শ সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি এনজিওর মালিক। শফিকুলের বাড়ি নাচোল উপজেলার বাউল গ্রামে। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার শিবতলায়। কিন্তু তাকে না জানিয়েই গোপনে ওই এনজিওর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য করেছিলেন শফিকুল।

টাকার লেনদেনের সঙ্গেও শরিফার কোনো সম্পর্ক নেই। কোথাও স্বাক্ষরও নেই তার। কিন্তু দুলাভাইয়ের এমন প্রতারণার শিকার হয়ে জেলে যেতে হলো।

শরিফার বড় ছেলে নাসিফ হাসানের বয়স ১০ বছর। সে বলে, ‘মা কারাগারে গেছে। ছোট বোনকেও কারাগারে নিয়ে গেছেন। বাবা অফিসে চাকরি করেন। বাড়িতে এখন আমাকে একা থাকতে হবে। আমার মা তো কোনো অপরাধ করেনি, কিন্তু মানুষের কারণে আমাদের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল’।

জানা গেছে, ‘আদর্শ সমাজ উন্নয়ন সংস্থা’র ছয়টি শাখা রয়েছে। এই সংস্থার নামে শফিকুল ইসলাম গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল টাকা আমানত সংগ্রহ করেন। কথা ছিল, মোটা অংকের সুদ দেওয়ার। কিন্তু গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা ফেরত না দেয়ায় মামলা করেন অনেকেই। বর্তমানে ১০টি মামলা রয়েছে এই সংস্থার বিরুদ্ধে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের উদয়ন সংঘ মোড় এলাকার লতিফুর রহমান নামে একব্যক্তি সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শফিকুলসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে শরিফা জাহানের নাম আসামির তালিকায় রয়েছে। আর এ মামলাতেই জেলে যেতে হয়েছে তাকে।

এর আগে চারটি মামলার আসামি হয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে আছেন শফিকুল ইসলাম। তার স্ত্রী শাহিনুর বেগমও আরেকটি মামলায় কারাবাস করছেন।

শফিকুল ইসলামের ছেলে মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমার খালা (শরিফা জাহান) এনজিওর লেনদেনের বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি এর সঙ্গে জড়িতও নেই। কিন্তু আমার আব্বা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে খালার নামটা রেখেছিল। এ কারণে গ্রাহকদের একাধিক মামলায় তাকেও (শরিফা) আসামি করা হয়’।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নাহিদ ইসলাম মুন বলেন, কারাগারের পরিবেশ শিশুদের অনুকূলে নয়। ওই পরিবেশ তাদের মনে দাগ কেটে ফেলে। ফলে শিশুরা সেখানকার আচার-আচরণ শিখে নেয়। এতে মানসিক ও শারীরিক দুই ধরনেরই ক্ষতি হয় শিশুদের।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2021 SomoyerKonthodhoni
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com