প্রতিদিনই গরমের দাপট বাড়ছে। প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। অত্যধিক তাপ দেহের জন্য ক্ষতিকর। এটি একাগ্রতার অভাব ঘটায়, অবসাদগ্রস্ত করে তোলে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ও নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি করে।
আমাদের জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে এই অসহনীয় গরম আবহাওয়ায়ও অনেকটা সতেজ থাকা সম্ভব। এ সময়ে খাবারদাবার বুঝেশুনে খাওয়া উচিত।
♦ গ্রীষ্মের এ সময় শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, লাল মাংস, তেলে ভাজা খাবার, বাইরের ফাস্ট ফুড বা অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে মৌসুমি শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ ও মুরগির মাংসকে খাদ্যতালিকায় প্রাধান্য দিতে হবে।
♦ দুপুরের খাবারের সঙ্গে বা বিকেলের নাশতায় সালাদ রাখতে হবে।
শসা-পুদিনা শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে, পাশাপাশি টক দইও এ ক্ষেত্রে কার্যকর। সে জন্য শসার সালাদে টক দই ব্যবহার করতে পারেন বা রাতের বেড টাইম স্ন্যাক্স হিসেবে রাখতে পারেন টক দই আবার সকালে রুটি-সবজির পরিবর্তে দই, চিড়া-কলাও রাখতে পারেন।
♦ গরমে খিচুড়ি, তেলে ভাজা পরোটা, পোলাও, বিরিয়ানির পরিবর্তে সাদা ভাত খাওয়া উত্তম। সঙ্গে পাতলা ডাল, মাছ বা মাংসের সঙ্গে সবজি দিয়ে রান্না করা পাতলা ঝোল, সবজি ও সালাদ প্রাধান্য দিতে হবে।
♦ গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। সে জন্য গ্রীষ্মের এই গরমে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি পান করতে পারেন খাবার স্যালাইন, লেবু পানি বা কচি ডাবের পানি।
♦ গরমের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় লেবুর শরবত, বিভিন্ন ফলের শরবত বিক্রি করতে দেখা যায়। সেগুলো একেবারে বর্জন করে চলতে হবে।
কারণ সেগুলো নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি করতে পারে। গ্রীষ্মকালে প্রচুর পানিযুক্ত ফল; যেমন—আম, জাম, তরমুজ, জামরুল, তালশাঁস, বাঙ্গি, পাকা পেঁপে ও বেল খেতে পারেন বা বিভিন্ন ফলের জুস বা স্মুদি মধ্যসকাল বা বিকেলের নাশতা হিসেবে খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
♦ সকালের নাশতায় বা দুপুরের খাবার তালিকায় কম তেল-মসলা দিয়ে রান্না করা মিশ্র সবজি বা সিদ্ধ করা সবজি রাখতে পারেন। আবার রাতে কম তেল-মসলা দিয়ে সবজির স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা সবজি-চিকেন স্যুপ পাতলা করেও খেতে পারেন।
আরো যা যা গুরুত্বপূর্ণ
♦ চা-কফি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে, সে জন্য গরমে অতিরিক্ত চা-কফি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
♦ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন আর বাইরে বের হলেও ছায়াযুক্ত স্থানে চলাফেরার চেষ্টা করবেন এবং ছাতা ব্যবহার করবেন।
♦ একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। কারণ গরমে একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করলে হাঁসফাঁস লাগতে পারে, সে জন্য অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করতে হবে।
♦ দোকান থেকে কেনা বাইরের অস্বাস্থ্যকর পানীয়, চিনিযুক্ত জুস বা কোমল পানীয় পান করা যাবে না। বাড়িতে জুস বা স্মুদি বানালে অতিরিক্ত চিনি বা কোনো সিরাপ যোগ করা থেকে বিরত থাকুন।
♦ অপ্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন। কর্মক্ষম থাকতে ঘরের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। যাঁরা নিয়মিত হাঁটেন, তাঁরা শুধু সময়ের পরিবর্তন করলেই চলবে অর্থাৎ যাঁরা সকালে হাঁটতেন, তাঁরা সকালে সূর্য ওঠার আগে হেঁটে নিন আর যাঁরা বিকেলে হাঁটতেন, তাঁরা সূর্যাস্তের পরে সন্ধ্যার সময় হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।
♦ আরামদায়ক ও হালকা রঙের পোশাক নির্বাচন করুন এবং দুইবারের বেশি গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
♦ প্রচণ্ড গরমে ঘরের বাইরে থেকে এসে অতিরিক্ত তৃষ্ণার্ত থাকার ফলে তৎক্ষণাৎ অনেকেই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানি, কোল্ড ড্রিংকস বা ঠাণ্ডা শরবত পান করে থাকেন। এগুলো একেবারেই অনুচিত। এতে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা হতে পারে।
লেখক
পুষ্টিবিদ
ফরাজী হাসপাতাল, বারিধারা